মাহফুজ শাকিল, মৌলভীবাজার থেকে : দেশের উন্নয়ন করতে হলে আবারো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে, আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবেনা। অনেক লড়াই সংগ্রাম করে এই দেশকে স্বাধীন করা হয়েছিল। ২১টি বছর এই দেশকে উল্টো পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ওই সময় বেঁচেছিলেন বলেই তিনি আজ দেশকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তাই এখন থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মানুষের কাছে গিয়ে উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দেয়ার দাবি জানাতে হবে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা প্রতিনিয়ত সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ মানুষ আওয়ামীলীগের পক্ষে রায় দিবে।
সোমবার (১৪ মার্চ) সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এক সময় ভিক্ষুকের জাতি ছিল এবং খুবই দরিদ্র দেশ ছিল। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশের আমূল পরিবর্তন এসেছে। ভবিষ্যতে পৃথিবীর মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রুপান্তরিত হবে বঙ্গবন্ধুর এই সোনার বাংলাদেশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা চুপ করে বসে থাকলে স্বাধীনতা বিরোধীরা বসে থাকবে না। জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীরা চুপিসারি ও গোপনে গোপনে সংগঠিত হয়। তারা দেশের মানুষকে অশান্তিতে রাখতে চায়। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এদের রুখতে হলে আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী দল হিসেবে তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় দেশ আজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের আমলে দেশের বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে। এছাড়া যারা ঠিকানাবিহীন ভাবে রাস্তায় ঘুরাফেরা করে দিনযাপন করতো সেই সকল ৩০ লাখ মানুষকে মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে চা-শ্রমিক, বেদে, হিজড়াসহ বিভিন্ন অনগ্রসর গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। দেশের উন্নতি দেখে পৃথিবীর অনেক দেশ আজ ইর্ষান্বিত হচ্ছে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্যে হল আওয়ামীলীগকে তৃণমূল পর্যায় থেকে ঢেলে সাজানো। আগামী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য এখন থেকে দলের সবাইকে একসাথে সকল ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে সুসংগঠিত হয়ে কাজ করতে হবে। এই স্বাধীন রাষ্ট্রের একমাত্র দাবিদার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগের হাতে এই দেশের ভবিষ্যৎ। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির আগেই তাকেসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করে চক্রান্তকারীরা। সেই চক্রান্তের পেছনে কাজ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান দেশকে উল্টো পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জয় বাংলার বিপরীতে পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নামে স্লোগান আনেন। কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার জয়বাংলা স্লোগানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যারা জামাত-শিবিেিরর রাজনীতি করছে তারা প্রকৃত ভাবে পাকিস্তানি সৈনিক। আর তাদের দুসর হলো বিএনপি। শেখ হাসিনা যতদিন থাকবেন ততদিন দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বিএনপির নির্বাচন করার কোন সক্ষমতা নেই। কারণ বিএনপির চেয়ারপার্সন দূর্নীতির দায়ে জেলে ছিলেন কিন্তুু আদালতের দয়ায় তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় আছেন। আর তাঁর ছেলে দূর্নীতিবাজ তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পলায়ন করে। বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, দেশের উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চায়। বিএনপির সকল ষড়যন্ত্রকে রুখতে হলে আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।
তিনি দলের জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, নতুন করে বিএনপি-জামাত থেকে লোক এনে আওয়ামীলীগের পাল্লা ভারী করার প্রয়োজন নেই। এই মনমানসিকতা যাদের কাছে আছে তারা সেটা পরিহার করতে হবে। জেলার সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে আগামী মে মাসের মধ্যে কাউন্সিল শেষ করতে হবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের যে নির্দেশনা দিবেন দলের সবাইকে তা মেনে নিতে হবে। তাঁর সঠিক নেতৃত্বে দলকে তিনি টানা তিনবার ক্ষমতায় এনেছেন। শেখ হাসিনা সবাইকে নেতা বানিয়েছেন। তিনি হলেন কমান্ডার আর আমরা হলাম যোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি বললে আমরা আমাদের জীবনও দিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না। কারণ যুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীরা শহীদ হয়েছিলেন। দলের সাথে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা দেশকে রক্ষা করতে জামাত-বিএনপিসহ দেশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলবো।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ নেছার আহমদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সংরক্ষিত নারী সাংসদ সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, সাবেক সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসীন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মসুদ আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মো: রফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আজমল হোসেন প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানগনসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।