লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে রাস্তার কাজ বন্ধে এলজিইডির চিঠি

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

অবশেষে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের সেগুন বাগানের ভেতরে রাস্তার কাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। একই সঙ্গে কাজের অনুমোদন পেতে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এলজিইডির মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজীম উদ্দীন সরদার আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এলজিইডি ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাঠিছড়া থেকে লালছড়া হয়ে রুপাছড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার জন্য এলজিইডি দরপত্র আহ্বান করে। প্রায় ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘প্যারাডাইস কনস্ট্রাকশন’ নামের স্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কার্যাদেশে ২ এপ্রিল কাজ শুরু করতে বলা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা সম্পন্ন হওয়ার কথা। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য রাস্তার পাশে ইট স্তূপ করতে শুরু করে এবং কাজ শুরু করে। পরে বন বিভাগের লোকজন খোঁজ নিয়ে রাস্তা পাকাকরণের বিষয়টি জানতে পারেন। বন বিভাগের স্থানীয় লাঠিটিলা বিটের ফরেস্টার সালাহ উদ্দিন এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে সংরক্ষিত বন এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়। এমনকি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সভায় বনের ভেতর অনুমোদন ছাড়া কোন কাজ করা যাবেনা মর্মে সিদ্ধান্তের বিষয়টিও অবহিত করা হয়।

লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে রাস্তা পাঁকা হচ্ছে কার স্বার্থে?

 

এদিকে রাস্তার কাজ বন্ধের আগ পর্যন্ত পুরো এক কিলোমিটার রাস্তার মাটি খোদাই করে বক্সের কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এলজিইডির মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আজীম উদ্দীন সরদার মুঠোফোনে বলেন, রাস্তাটির কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। বনবিভাগ থেকে অনুমোদন পেলে পুনরায় কাজ শুরু হবে, অনুমোদন না পেলে কাজ বন্ধ থাকবে।

সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, এলজিইডি থেকে পাঠানো চিঠি এখনে পাননি। তাছাড়া কাজ শুরু করার অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার তাঁর কাছে নেই। কাজ শুরুর আগে অনুমোদন নেয়া উচিত ছিল এলজিইডির।  এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে অনুমতি নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্প গ্রহণ হলো, কার্যাদেশ দেওয়া হলো, কাজও শুরু হয়ে গেল, এখন অনুমতির প্রয়োজন পড়েছে এলজিইডি’র। যাইহোক সেটাও সরকারের একটি বিভাগ। কাজ শুরুর আগে যদি আবেদন করা হতো তাহলে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বসে আলোচনা করে একটি  প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যেত। পরে মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিত।

এ দিকে রাস্তাটি নিয়ে দি নিউ নেশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা গত ২৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান। এ নোটিশের বরাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লাঠিটিলা বন পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ। প্রাকৃতিক মিশ্র চিরসবুজ এ বনের আয়তন ৫ হাজার ৬৩১ একর। ১৯২০ সালের ২১ এপ্রিল সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বনকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এ বনাঞ্চলে ২০৯ প্রজাতির প্রাণী ও ৬০৩ ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি আছে। বনের ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচল করলে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হবে এবং বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জুড়ীর লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে পাকা রাস্তা-কাজ বন্ধে ১১ জনকে বেলার আইনি নোটিশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *