উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার লামাকাজী, খাজাঞ্চী ও অলংকারী ইউনিয়নের বন্যাকবলিতদের জন্য ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে লামাকাজী ইউনিয়নের মাহতাবপুর এলাকায় নদীর তীরে চলমান ব্লক বসানোর কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার (সঠিক সময়ে ব্লক না বসানোর ফলে) কারণে বন্যার পানিতে ভেঙে অনেক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসতঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে পরিবার-পরিজনের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু নিয়েও বিপাকে রয়েছে মানুষজন।
সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে নতুন নতুন আরো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। পানি বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যে সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনসাধারণকে ব্যবহার করতে হচ্ছে নৌকা-ভোরা। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্লাবিত হয়েছে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পাঁচ হেক্টর বোরো ফসল, ৩০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজিক্ষেত। এমন পরিস্থিতে মানবেতর জীবন যাপনর করছে এসব এলাকার মানুষ।
এ ব্যাপারে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল বলেন, বন্যার পানিতে ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড নিমজ্জিত হয়ে গেছে। আর যে হারে পানি বাড়ছে তাতে পুরো ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার মাহতাবপুর এলাকার নদীর তীরে ব্লক বসানোর কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে অনেক বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ তথ্য জানিয়ে লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ অব্যাহত করছে। বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এলাকার নিম্নাঞ্চলসহ রাস্তাগুলোও তলিয়ে রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। চরম মানবেতর দিনযাপন করছে পানিবন্দি মানুষ। পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা খুবই জরুরি।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, যে সকল বিদ্যালয় পানিবন্দি রয়েছে, সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব বলেন, লামাকাজী ইউনিয়নের পিএমসি একাডেমি ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের লজ্জতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, ইতিমধ্যে পানিতে প্রায় পাঁচ হেক্টর বোরো ফসলি জমি, ৪০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা ও ১৮ হেক্টর সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক নুসরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এর জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়ণকেন্দ্র হিসেবে প্রয়োজনে ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত ছয় মেট্রিক টন চাল (ত্রাণ) গত দুই দিন বিতরণ করা হয়েছে। আজ বুধবারও বিতরণ করা হচ্ছে। সঠিক সময়ে ব্লক না বসানোর ফলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টিও স্যারদের জানানো হয়েছে। সর্বোপরি পুরো পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।