কুলাউড়ায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে সভা, এসপির হুঁশিয়ারি (ভিডিওসহ)

মাহফুজ শাকিল :  মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার বৃদ্ধি করেছে বিজিবি ও পুলিশ। এরই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর কুলাউড়ার সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান রোধকল্পে সীমান্ত এলাকার দুটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে উপজেলার মুড়াইছড়া বাজারে কুলাউড়া থানা পুলিশ এ সভার আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কুলাউড়ায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে যারা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অপরাধ দমনে সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় এলাকার মানুষ তথ্য দিয়ে বিজিবি ও পুলিশকে সহযোগিতা করে এগিয়ে আসতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে। প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকায় রাত্রিকালীন পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে সীমান্তের ওপাশ থেকে আর যেন নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা দেশে অনুপ্রবেশ না করতে পারে। তথ্য দিয়ে যারা এই দায়িত্ব পালন করবেন তারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে এবং পুলিশের কাছে জনবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত হবেন। যারা তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন না, দালাল ও চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব অন্যায় ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করা আমাদের সব নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

kalerkantho

এ সময় পুলিশ সুপার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সীমান্ত এলাকায় যারা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড, যারা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পুনরায় দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় সীমান্তের ওই পাশের দালালের সঙ্গে এ পাশের দালালদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং যারা এই কাজে সহযোগিতা করবে তাদের কঠোর আইনি ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা ট্রেডিশনাল আইন প্রয়োগ করব না। রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর আইনগুলো প্রয়োগ করব।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ, পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এম জিমিউর রহমান চৌধুরী, কর্মধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মছদ্দর আলী, ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাঠাং, আব্দুল মতিন, আব্দুল কাদির, মশাহিদ আলী, মুড়াইছড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উস্তার মিয়া প্রমুখ।

kalerkanthoএ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের ডিআইও-১ মো. আব্দুল হাই, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. বদিউজ্জামান, কুলাউড়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এনামুল ইক, ডিএসবির ইন্সপেক্টর মো. রজিউল্লাহ খান, আলীনগর বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার নজরুল ইসলাম, মুড়াইছড়া বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল মান্নানসহ বিজিবি ও থানা পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া সীমান্তের সেই আলোচিত ১৮৪৬ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার যে এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছিল সেই এলাকা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।

প্রসঙ্গত, কুলাউড়ার কর্মধা ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলীনগর-মুড়াইছড়া সীমান্তের ১৮৪২-১৮৫১ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন চোরাচালান আসতো। এছাড়া কুলাউড়ার চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে বৈধভাবে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকার কারণে এই দুই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ে। নতুন করে আলোচনায় যুক্ত হয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। এই কাজের সঙ্গে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন চোরাকারবারিরা বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। অর্থের বিনিময়ে বিজিবির তালিকাভুক্ত ও এলাকার চিহ্নিত ১৫-২০ জন চোরাকারবারি এসব কাজে সক্রিয় রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। শিকড়িয়া সীমান্তের ১৮৪৬ নম্বর সীমানা পিলারের ভারতের পাহাড়ি সেগুন টিলা এলাকা দিয়ে চোরাচালান ও পাচারকারীরা বেশ সক্রিয় রয়েছে। পৃথিমপাশার শিকড়িয়া সীমান্ত দিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১২ মে পর্যন্ত ৩৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ।

সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ চোরাচালান বিষয়ে গত ১৬ মে কালের কণ্ঠের প্রিন্ট সংস্করণে ‘চেকপোস্ট বন্ধ, অনুপ্রবেশ বাড়ছে’ ও অনলাইনে সীমান্ত ‘চোরাকারবারিরা সক্রিয়, এক বছরে ৩৯ রোহিঙ্গা আটক’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।-কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *