বিশেষ প্রতিনিধি : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের বিবিদইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে গোটা এলাকাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামের এহেন কার্যক্রমে শিক্ষক সমাজের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার (২২ মে) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (৩য়) আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম। মামলা দায়েরের পর ঘটনার তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশ প্রদান করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (৩য়) আদালতের বিচারক শারমিন জাহান নিলা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদিপক্ষের আইনজীবী মো. তাজ উদ্দিন। এর আগে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান পীর ফয়জুল হকসহ কমিটির ৫ সদস্য সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের বিবিদইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আগের মেয়াদের সভাপতি আব্দুল ওহাব খান মৃত্যুবরণ করলে কমিটির অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সকল সদস্যের সম্মতিতে গত ৩০/৬/২০২১ তারিখে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত কমিটিতে বিবিদইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান পীর মো. ফয়জুল হক-কে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। গত প্রায় এক বছর যাবত বর্তমান সভাপতি পীর মো. ফয়জুল হকের নেতৃত্বে ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। আগামী ৯ জুন পর্যন্ত বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা কিছুদিন আগে হঠাৎ লোকমুখে জানতে পারেন যে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিকে কোনোরূপ অবহিত না করে মো. দিলওয়ার আলী খানকে সভাপতি করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন। খোঁজ নিয়ে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ জানতে পারেন- কথিত এই কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একটি সভার রেজুলেশন রেজিস্ট্রার খাতায় রয়েছে এবং এর কপি শিক্ষাবোর্ডে দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এ সভার ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কেউ-ই অবগত নন এবং মূলত এ ধরনের কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ওই তারিখের ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করেছেন। ম্যানেজিং কমিটির কোনো সদস্যের স্বাক্ষর এ রেজুলেশনে নেই। বরং তাদের স্বাক্ষর ওই রেজুলেশনে জাল করা হয়েছে। এছাছাও এ রেজুলেশনে বিদ্যালয়ে ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি- মো. মাহবুবুল আলম, মো. গোলাম মোস্তফা ও সায়মা বাহার চৌধুরী এবং অভিভাবক সদস্য আব্দুল বারী, চাম্পা লাল দেব ও সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক সদস্য মোছা. খাদিজা বেগমের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে বিবিদইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, লালাবাজার ইউনিয়ন পীর মো. ফয়জুল হক (সভাপতি), দাতা সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, অভিভাবক সদস্য আছাব উদ্দিন, সদস্য ফিরোজ আলী (সদস্য) ও কয়েছ আহমদ (সদস্য) বিবিদইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের জাল-জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা এবং ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত সিলেট শিক্ষা বোর্ডের স্মারকপত্রের কার্যকারিতা স্থগিত করার আবেদন জানান। এ বিষয়ে সিলেট শিক্ষা বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বর্তমান কমিটির সদস্যরা আদালতের শরণাপণ্ন হন এবং রবিবার মামলা দায়ের করেন।
