সিলেটে গৃহবধূ নাজমিন হত্যা আসামী গ্রেফতারে নিষ্ক্রিয় পুলিশ

সিলেট ব্যুরো : সিলেট শহরতলীর জালালাবাদের মইয়ারচরে স্বামীর বাড়িতে নিহত গৃহবধু নাজমিন আক্তার হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতারে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছে নাজমিনের পরিবার। পরিকল্পিত খুনের ঘটনাকে আড়াল করতে দরোজা ভেঙে নাটক সাজিয়ে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে স্বামীর বাড়ির লোকজন। পুলিশও প্রথমে আত্মহত্যা বলে মেনে নিয়েছিল। পরে ঘটনার বিবেচনায় সেটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে নাজমিনের স্বামী নাঈম উদ্দিন ও পরিবারের সদস্যরা। গত সোমবার বিকালে স্বামী নাঈমের বাড়িতে ঘটে এ ঘটনা। মইয়ারচরে বাড়ি স্বামী নাঈম উদ্দিনের। এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায় জড়িত সে। পার্শ্ববর্তী জালালাবাদ ইউনিয়নের রায়েরগাঁওয়ের আব্দুস সাত্তারের দ্বিতীয় মেয়ে নাজমিন আক্তার। স্থানীয় নলেজহোম একাডেমির শিক্ষিকা। শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত নাজমিন আক্তারকে পারিবারিকভাবে গত জানুয়ারি মাসে নাঈমের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের আগের দিন থেকে নাঈম ও নাজমিনের পরিবারের টানাপড়েন শুরু।

নাজমিনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিয়েতে উপহার দেয়া ফার্নিচার নিয়ে আপত্তি তোলেন নাঈমের পিতা সাঈম উদ্দিন। তিনি দাবি করেন ফার্নিচার নি¤œমানের। বিয়ের পর নাজমিন স্বামীর গৃহে আসার পর এ নিয়ে নানা কথা চলে। লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাশুড়ী রেহেনা বেগম। এ কারণে প্রায়ই নাজমিনকে মানসিক নির্যাতন করা হতো। একপর্যায়ে প্রতিবাদী হন নাজমিন। এতে তার উপর শাস্তির মাত্রা আরও কঠিন হয়। স্বামী, শাশুড়ি মিলে নাজমিনকে মারধর করতো। এসব বিষয় নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্ব›দ্ব শুরু হলে নাজমিনকে পিতার বাড়িতে পাঠানো বন্ধ করে দেয় স্বামীর পরিবার।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বিয়ের ৫ মাস হলেও নাঈমের পরিবার মেয়েকে পিতার বাড়িতে বেড়াতে যেতে দিতো না। অনেকটা জোর করেই নাজমিনকে আটকে রাখে। গত ঈদের পর পিতা ও ভাইয়েরা এ নিয়ে প্রতিবাদী হলে নাজমিনকে পিতার বাড়িতে পাঠানো হয়। তারা জানান, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় স্বামীর বাড়ি থেকে নাজমিনকে পিতার বাড়ি পাঠালেও কেউ যোগাযোগ করেননি। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে এসে নাজমিনকে চিকিৎসা করানো হলেও স্বামী কিংবা তার পরিবারের কেউ দেখতে যায়নি।

মামলার এজাহারে নাজমিনের পিতা আব্দুস সাত্তার উল্লেখ করেন- ঘটনার কিছুদিন আগে থেকে যৌতুক হিসেবে নাজমিনের কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে নাঈম ও তার পরিবারের সদস্যরা। গত সোমবার তিনি, তার স্ত্রী ও ছেলে নাজমিনকে স্বামীর বাড়ি নিয়ে গেলে তাদেরকে এক রুমে বসিয়ে রেখে নাজমিনকে ভেতরের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় নাঈম ও তার পরিবারের সদস্যরা নাজমিনের কাছে ১ লাখ টাকা চায়। টাকা নিয়ে আসেনি বলে জানালে নাঈম ও তার পরিবারের লোকজন নাজমিনকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। স্বামী নাঈম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নাজমিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে নাজমিনকে বাথরুমে নিয়ে কাপড়ের স্ট্যান্ডের সঙ্গে বেঁধে রাখে।

আব্দুস সাত্তার জানান, তখন আমরা চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। কিন্তু পালিয়ে যায় নাঈম ও তার পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নাজমিনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার জালালাবাদ থানায় মামলা করেন আব্দুস সাত্তার। মামলায় আসামি করা হয়েছে নাজমিনের স্বামী নাঈম উদ্দিন, তার ভাই ফরহাদ উদ্দিন, নাসিম উদ্দিন, নাহিদ উদ্দিন, পিতা সাইফ উদ্দিন, মা রেহেনা বেগম ও খালা রুমি বেগমকে। আব্দুস সাত্তার জানান, ‘নাজমিনের লাশ বাথরুমের স্ট্যান্ডের সঙ্গে বাঁধা ছিল এবং পা ছিল মাটিতে। তার গলায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া, বাথরুমের দরোজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল না। পরে পুলিশের কাছে নাঈদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থাপন করে দরোজা ভেঙে নাজমিনকে উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘বিষয়টি সত্য নয়। পরিকল্পিত খুনের ঘটনাকে আড়াল করতে দরোজা ভেঙে নাটক সাজিয়ে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। পুলিশও প্রথমে আত্মহত্যা বলে মেনে নিয়েছিল। পরে ঘটনার বিবেচনায় সেটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে।’

নিহতের বড় ভাই মিজান উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘নাজমিনকে খুনের পর যখন লাশ উদ্ধার করা হয় তখনই পালিয়ে যায় নাঈম ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের পরিবারের কেউই লাশ নিয়ে হাসপাতালে আসেনি। পারিবারিক স্বজনরা এলেও পরে তারা চলে যান।’ তিনি জানান, ‘মামলা করা হলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করেনি। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে পরিকল্পিত খুনের ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে নাঈমের স্বজনরা। খুন হওয়ার সময় নাজমিন তিন মাসের অন্তঃস্বত্বা ছিল বলে জানান মিজান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার সাব-ইন্সক্টের অমিত সাহা জানিয়েছেন, ঘটনার পর তদন্তকালে দরোজার ছিটকিনি ভাঙা পাওয়া গেছে। কে ভেঙেছে সেটি আমরা তদন্ত করছি। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *