শ্রীমঙ্গলের করলার গ্রামে এবারও করলার বাম্পার ফলন

বিকুল চক্রবর্তী: বিগত কয়েক দশক ধরে একযোগে বেশ কিছু কৃষক করলার চাষ করে ও প্রতিবছরই বাম্পার ফলনে এবার গ্রামের নাম পড়ছে করলার গ্রাম। কেউ সবজীর গ্রামও বলেন।

যে যে নামেই ডাকেন না কেন গ্রামের মূল নাম পাড়ের টং। এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নে পড়েছে। গ্রামের ভিতর প্রবেশের পর দৃষ্টি জুড়ে দেখা মিলে করোলার মাচাং। সবুজ পাতায় ঘেরা এই মাচার নিচেই ঝুলে আছে করোলোগুলো।

শ্রীমঙ্গল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুক মিয়া জানান, এই গ্রামের প্রায় শতাধিক একর জায়গা জুড়ে লালতীর সীডের টিয়া ও টিয়া সুপার জাতের করোলা চাষ করেছেন বেশিরভাগ কৃষক। করলা চাষ করে কৃষকরা যেমন সাবলম্বী হয়েছেন তেমনি দৈনিক মজুরি হিসেবে করোলা খেতে কাজ করে স্থানীয় নারী পুরুষরা লাভবান হচ্ছেন।

গ্রামের করলা চাষী মো: নসু মিয়া জানান, তিনি লাল তীর সীডের টিয়া জাতের করলা বীজ এনে প্রথম পাড়ের টং গ্রামে বানিজ্যিকভাবে চাষ করেন। পরে তাঁর বাম্পার ফলন দেখে অনেকে করলা লাগানো শুরু করেন।

এখন গ্রামের ঘরে ঘরেই করলা চাষী।তিনি বলেন, “গ্রামের অনেক মানুষ এখন করলা চাষ করছে। নিজেরা সাবলম্বী হইছে এটা দেখে আমার ভালো লাগে। এখনও কেউ আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসলে আমি সাহায্য করি।”

গ্রামের গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, আমার নিজের জমি নাই। আমি প্রতিদিন অন্যের খেতে কাজ করে ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি পাই।

এই করলাসহ অনান্য সবজি বিক্রয়ের জন্য পাড়ের টং এলাকায় খোলা পাড়ের টং কালেকশন পয়েন্ট বাজার। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য পাইকার ভি করেন করলা ক্রয় করতে।

পাড়ের টং কালেকশন পয়েন্ট বাজারের সাধারণ সম্পাদক মো: হামদুল হক বলেন, এখানে আমরা একটা দাম নির্ধারণ করি। পাইকাররা এই দামেই কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, প্রতিদিন আট-দশ হাজার কেজি করোলা এই কালেকশন পয়েন্ট থেকে বিক্রি হয়।

লালতীর সীড লিমিটেড এর ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, এই গ্রামে আগে স্থানীয়রা ধান, কচু, লতাসহ অনান্য সবজী চাষ করতেন। এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারই করলা চাষের সাথে জড়িত । আমরা এই গ্রামের মানুষের কাছে প্রথমে টিয়া ও পরে টিয়া সুপার জাত চাষ করার পরামর্শ দেই।তারা তা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। বলতে গেলে  এ ফলন আমাদের আশার চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, করোলার টিয়া ও টিয়া সুপার একটি দিবস নিরপেক্ষ হাইব্রিড জাত। উচ্চতা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত। তীব্র শীত ব্যতীত সারা বছর এটি চাষ করা যায়। ফল আকর্ষণীয় সবুজ রঙের ও মধ্যম খাঁজযুক্ত। ফল খেতে মাঝারি তিক্ত নরম ও সুস্বাদু। ফল ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ওজন ২৫০-২৮০ গ্রাম। একর প্রতি এর ফলন হয় ১২-১৩ টন। রোপণের ৪২ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়।

মঙ্গলবার বিকেলে পাড়ের টংএ করলার এ বাম্পার ফলন দেখতে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল আসেন লাল তীর সীড মার্কেটিং এর প্রধান ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ জহির আহমেদ। তিনি বলেন, “করলার এ বাম্পার ফলন নিজ চোখে দেখতে এলাম। সত্যি ফলন দেখে আমি অভিভুত।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, করলা চাষ লাভজনক হওয়ার কারনে দিন দিন এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবছর ৩০ হেক্টরেরও অধিক জমিতে করোলা চাষ হয়েছে।যার ৯০ ভাগই পাড়ের টং গ্রামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *