বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের লাশের দাবীতে উত্তাল ফুলতলা

বিশেষ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফএর গুলিতে নিহত আব্দুল মুমিন বাপ্পা (৩০) এর লাশ তিন দিনেও ফেরত আসেনি বাংলাদেশে। লাশ ফেরতের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন স্বজনরা। বাপ্পার লাশ দেশে না আসায় তাঁর পরিবারের স্বজনরা ও স্থানীয় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ২২ মার্চ সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অফিস ঘেরাও করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ জনতা বিজিবি ক্যাম্প অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি, আজকের মধ্যেই যেন বাপ্পার লাশ দেশে আনা হয়। এর আগে গত শনিবার নিহত যুবক বাপ্পার পিতা আব্দুর রউফ স্থানীয় ফুলতলা বিজিবি ক্যাম্পের সুবাদার বরাবরে লাশ ফেরত চেয়ে লিখিত আবেদন করলেও বিজিবির ওই কর্মকর্তা তাঁর আবেদন গ্রহণ করেননি।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেলা ১টা থেকে ৩টার ভেতরে ভারত সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে লাশ ফেরত নিতে বিজিবিকে চিঠি দেয় বিএসএফ। তখন বিজিবি লাশ নেওয়ার বিষয়টি পরে বিএসএফকে জানাবে বলে পতাকা বৈঠকের সমাপ্তি করে চলে আসে।
নিহত যুবক বাপ্পার পিতা আব্দুর রউফ সোমবার দুপুরে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার ছেলের লাশ ফেরত চেয়ে গত ২০ মার্চ শনিবার বিজিবির কাছে লিখিত আবেদন করলেও আবেদনটি গ্রহণ করেননি বিজিবি। আমার ছেলের লাশ ফেরত চাই। ছেলের লাশ দেশে না আসায় পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ছেলের লাশ দাফন করার জন্য দেশে আনা প্রয়োজন মর্মে বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার দেলোয়ারের হোসেনের কাছে আবেদন করি কিন্তুু তিনি আমার আবেদনটি গ্রহণ করেননি। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও আমার ছেলের লাশ দেশে না আসায় স্থানীয় এলাকাবাসীদের নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে বিক্ষোভ করে অফিস ঘেরাও করেছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে বিজিবির উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি অনতিবিলম্বে আমার ছেলের লাশ যেন দেশে ফেরত আনা হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মইনুদ্দিন ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ইমতিয়াজ আহমদ মারুফ জানান, লাশ দেশে না আসায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উত্তেজিত জনতা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে বিজিবির-৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিইও) শাহ আলম সিদ্দিকী ক্যাম্পে এসে লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্থ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে বিজিবির ফুলতলা ক্যাম্পের সুবেদার দেলোয়ার হোসেনকে একাধিক বার (০১৭৬৯-৬১৩৫৭৩) ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে বিজিবির-৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিইও) শাহ আলম সিদ্দিকী মুঠোফোনে সোমবার বিকেল ৩টায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ফুলতলা সীমান্তে একজন বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। কিছু আইনী জটিলতা থাকার কারণে নিহত যুবকের মরদেহ দেশে আসতে দেরি হচ্ছে। ক্যাম্পের সামনে নিহত যুবকের বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসীর উত্তেজনার খবর শুনে আজ সরেজমিন সীমান্ত ক্যাম্পে এসেছি। তিনি আরো বলেন, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ পতাকা বৈঠক করে নিহত যুবকের মরদেহ দেশে আনা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ শনিবার ভোররাতে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বিটুলী এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আব্দুল মুমিন বাপ্পা (৩০) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। শনিবার ভোররাতে ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বিটুলী এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ইয়াকুব নগর এলাকায় ভারতীয় ১৮২২ নম্বর পিলারের কাছে বাপ্পার মরদেহ থাকতে দেখা যায়। নিহত যুবক বাপ্পা ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বিটুলী গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে। এদিকে প্রায় ২ বছর আগে একই স্থানে বাপ্পার চাচা আব্দুল কালাম ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *