মা হাসপাতালে, বাবা জেলহাজতে; সন্তানদের আর্তনাদ

কুলাউড়া প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার জয়চন্ডী ইউনিয়নের বৈঠাং জালাই এলাকায় পূর্ব বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলায় রুলী বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধু গুরুতর আহত হয়ে ১৬ দিন ধরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া প্রতিপক্ষের দেয়া মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন গৃহবধুর স্বামী মনির মিয়া। গৃহবধু হাসপাতালে ও তাঁর স্বামী জেলহাজতে থাকায় তাদের ৪ সন্তান বাবা-মাকে ছাড়া বাড়িতে আর্তনাদ করছেন। এ ঘটনায় গৃহবধুর ভাই সামিউল ইসলাম সুরমান বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন- জয়চন্ডী ইউনিয়নের পাঁচপীর জালাই এলাকার বাসিন্দা মানিক মিয়ার ছেলে সাদ্দাম মিয়া (৩০), মৃত সাজিদ মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম (৩০), বৈঠাং জালাই এলাকার বাসিন্দা দরছ মিয়ার ছেলে তাজুল ইসলাম (৩২), বদরুল ইসলাম (২৫), কামরুল ইসলাম (২২)। এছাড়া অজ্ঞাত রয়েছেন আরো ২/৩ জন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামী সাদ্দাম মিয়াকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়চন্ডী ইউনিয়নের বৈঠাং জালাই এলাকার বাসিন্দা মনির মিয়ার সাথে একই এলাকার তাজুল ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিলো। বিরোধের কারণে মনির মিয়ার স্ত্রী রুলি বেগমের ওপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম গং। গত ৫ মে মনির মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে যান তাঁর শ্যালিকা। শ্যালিকার ওপর খারাপ লোলুপদৃষ্টি পড়ে ওই এলাকার বখাটে কামরুল ইসলামের। ঘটনার দিন ৮ মে রাত সাড়ে সাতটায় মনির মিয়া তারাবীর নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে বাড়ি একা পেয়ে তাঁর শ্যালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় কামরুল। এসময় তাঁর আত্মচিৎকারে মনির মিয়ার স্ত্রী রুলি বেগম এগিয়ে আসলে একই এলাকার সাদ্দাম মিয়া, কামরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, বদরুল ইসলাম, কামরুল ইসলামসহ একদল লোক রুলি বেগমের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা করে এলোপাতাড়িভাবে কুপাতে থাকেন। হামলায় গুরুতর আহত রুলি বেগমকে তাৎক্ষনিক তাঁর স্বজনসহ স্থানীয়রা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়া আসিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁর অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দেন। পরে গৃহবধুর স্বজনরা তাকে ওসমানীতে ভর্তি করলে ১৬ দিন ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে এই ঘটনার পূর্বে তাজুল ইসলামের সাথে মনির মিয়ার মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হবে না বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনু মিয়া আপোষে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিবেন বলে উদ্যোগ নেন। তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরুসহ স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য মনির মিয়ার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেন। মনির মিয়া সেই টাকা পরিশোধ করলেও তাজুল ইসলামের দেয়া মামলায় তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। মনির মিয়া জেলহাজতে ও তাঁর স্ত্রী রুলি বেগম হাসপাতালে থাকায় তাদের সন্তান মুমিন মিয়া (১৬), তুহিন মিয়া (১৪), রুহিন মিয়া (১০) বাড়িতে তাদের ফুফুর কাছে রয়েছেন এবং সোহান মিয়া (২) তাঁর মামীর বাড়িতে আছেন। বাবা-মাকে ছাড়া ওই সন্তানরা বাড়িতে থেকে আর্তনাদ করছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনু মিয়া বলেন, মনির মিয়া ও তাজুল ইসলামের পরিবারের সাথে বেশ কয়েকটি মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিরোধের জেরে মনির মিয়ার শ্যালক সুরমান গংরা তাজুল ইসলামের ওপর হামলা চালালে তাজুল গুরুতর আহত হন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তাজুলের চিকিৎসার জন্য সালিশি বৈঠকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। আর মনির মিয়ার স্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় দোষীদের অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার এস আই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফখরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দিয়েছে। পুলিশ সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনায় দু’পক্ষের দুজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *