কুলাউড়ার হেলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হেলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনের পুনঃসংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ফলে সংস্কারকাজ শেষে মাস যেতে না যেতে, আবারো ক্লিনিকটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্লিনিকের দায়িত্বরত প্রোভাইডার তাহমিনা ওয়াহিদ বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এদিকে কাজে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় লোকজন ক্লিনিকের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজারের ৮নং ওয়ার্ডের হেলাপুর গ্রামে দুই কক্ষ, একটি স্টোর ও ওয়েটিং রুম এবং এক টয়লেট বিশিষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনটি নির্মাণ করা হয় ২০০০ সালে। এরপর ক্লিনিকটি অনেক জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। নতুন করে ক্লিনিকটি পুনঃসংস্কার কাজ করার জন্য চলতি বছর সাড়ে চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস শাওন এন্টারপ্রাইজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই মাস আগে কাজ শুরু করে। কাজের মধ্যে রয়েছে ক্লিনিকের ভবনের রং করা, ইলেকট্রিক, স্যানিটারি, ফ্লোর টাইল্স, বাথরুম টাইল্স, দরজা-জানালা মেরামত, ভবনের ছাদে নেট ফেডেন স্টোনসহ পুরো ক্লিনিককে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য পুনঃসংস্কার করা।
সরেজমিন হেলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে দেখা যায়, ক্লিনিকের ভেতরে দেয়াল ও মেঝেতে অনেক টাইল্স উঠে গেছে। এসময় প্রায় এক ঘন্টা ক্লিনিকে অবস্থান করলেও ঠিকাদারের কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন ও ক্লিনিকের সভাপতি, দায়িত্বরত প্রোভাইডার বলেন, ভবনের ফলছাদে যে পরিমাণ ফিটনেস দেয়ার কথা থাকলেও তা পরিমাণ মতো দেয়া হয়নি। ঠিকমত ভবনের রং করা হয়নি। পুরাতন ভবনের রং করা দেয়াল থেকে রং না ছাড়িয়ে কোন ধরণের কিপিং ছাড়া যত সামান্য সিমেন্ট ও বালুর পরিমাণ বেশি দিয়ে টাইল্স লাগানো হয়। এক মাসের মাথায় সেই টাইল্স দেয়াল থেকে খসে পড়ে। এছাড়া ক্লিনিকের মেঝেতে সিমেন্টের পরিমাণ কম দিয়ে বালুর পরিমাণ বেশি দিয়ে টাইল্স বসানো হয়েছে। এদিকে ক্লিনিকের সংস্কার কাজের অনিয়মের খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সরেজমনে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে কাজের অনিয়মের সত্যতা পেয়ে কিছু দিন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আবার কাজ শুরু হলে গত ৯ অক্টোবর পুনরায় কাজের অনিয়মের খবর পেয়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোঃ আব্দুল আউয়াল সরেজমিন ক্লিনিক পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পেয়ে কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেন। তিনি দেখতে পান ক্লিনিকের ফ্লোরে সিমেন্ট না দিয়ে বালুর উপরে টাইলস বসিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, ক্লিনিকের সংস্কার কাজের মান খুবই খারাপ। কোন ধরণের সিমেন্ট না দিয়ে শুধু বালু দিয়ে টাইল্স লাগানোর কারণে তা উঠে গেছে। এ কারণে স্থানীয় লোকজন কাজ বন্ধ করে দেন।
কাজে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সঠিকভাবে কাজ করেছি। কেউ যদি ইচ্ছে করে টাইল্স তুলে নেয় তাহলে আমি কি করবো। কাজের জন্য আমার এক বছরের সিকিউরিটি জমা আছে। অনিয়ম হলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সেটি দেখবে। কোন অনিয়ম হলে আমি অবশ্যেই তা মেরামত করে দিবো।
মৌলভীবাজার জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল হক বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, কাজের বন্ধের বিষয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান আমাদের জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে সরেজমিন ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান সরকার পুরাতন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে কোন অনিয়ম হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, হেলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পুর্ণ:সংস্কার কাজে ঠিকাদার কর্তৃক অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। আমিসহ স্বাস্থ্য পরিদর্শক সরেজমিন পরিদর্শন করে কাজের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সঠিকভাবে করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তুু এখনো ঠিকাদারী প্রতিষ্টান কাজ শুরু করছে না। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *