কুলাউড়ায় টাকার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা, অতঃপর ঘাতক গ্রেফতার

কুলাউড়া প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে তুহিন আহমদ (১৮) নামে এক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে হত্যার প্রধান আসামী আয়ান বাউরী (২০) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ৮দিন পর ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে ঘাতক আয়ান বাউরিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের ডবলছড়া চা বাগান এলাকা থেকে আয়ান বাউরিকে গ্রেফতার করে। ঘাতক আয়ান ডবলছড়া চা বাগানের বাসিন্দা মৃত বসু বাউরির ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১১ অক্টোবর সোমবার রাত সাড়ে আনুমানিক ১১টায় উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব বাবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সজ্জাদ আলীর ছেলে ও বাবনিয়া নিজামিয়া আলিম মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র তুহিন আহমদকে রাঙ্গিছড়া চা-বাগানের ১নং সেকশনের ভেতর দেশীয় অস্ত্র (দা) দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তুহিনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। লাশ উদ্ধারের পর ১২ অক্টোবর নিহত তুহিনের বাবা সজ্জাদ আলী বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই মামলার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই আব্দুর রহিম জিবান ও শাহ আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ পুলিশ শমশেরনগরের ডবলছড়া চা বাগান এলাকা থেকে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আয়ান বাউরিকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ আরো জানায়, মামলার প্রধান আসামী আয়ান বাউরী কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের ভালাইরমা পুঞ্জিতে শ্রমিকের কাজ করতো। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সে সেখান থেকে চলে আসে স্থানীয় রাঙ্গিপুঞ্জিতে কাজের জন্য। কাজ করে যে টাকা পেত তা থেকে তার বাড়িতে মাঝেমধ্যে কিছু টাকা পাঠাতো। কিন্তুু শারদীয় দূর্গাপূজার জন্য তার টাকার প্রয়োজন পরে। তখন সে পরিকল্পনা করেছিল রাঙ্গীছড়া চা-বাগানের ১নং সেকশনের ভেতরের পূর্ব পাশের্^র রাস্তা দিয়ে কোন খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোক গেলে তাদের ওপর সে হামলা করে টাকা লুট করবে। ঘটনার দিন রাতে ওই রাস্তা দিয়ে কোন খাসিয়া লোক যায়নি। একপর্যায়ে মাদ্রাসা ছাত্র তুহিন ওই রাস্তা দিয়ে রাঙ্গিছড়া চা-বাগানের পাশে মনছড়া এলাকায় তাদের পানজুমে তার বাবার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলো। তখন রাত ৯টা থেকে উৎ পেতে থাকা আয়ান বাউরী তুহিনকে গতিরোধ করে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার ঘাড়ের পিছনের দিকে দা দিয়ে কুপ দিয়ে বাগানের রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়, এতে ঘটনাস্থলে তুহিন মারা যায়। আর ঘাতক আয়ান বাউরী তুহিনের সাথে থাকা ম্যানিব্যাগে ৫২০ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পলায়ন করে। এরপর ঘাতক আয়ান বাউরীকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে কমলগঞ্জের ডবলছড়া চা-বাগান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুর রহিম জিবান বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামী আয়ান বাউরীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে হত্যাকান্ডের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দা ও নিহত তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।

কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, টাকার জন্য আয়ান দা দিয়ে ওই মাদ্রাসা ছাত্র তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। গ্রেপ্তারের পর প্রধান আসামীকে বুধবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *