কুলাউড়া সীমান্তে চোরাকারবারিদের গডফাদার কারা, জানাল বিজিবি

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানের চিহ্নিত  গডফাদারদের নাম, ঠিকানা জানালো বিজিবি। এদের আইনের আওতায় নিতে প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠনের দাবী করেন বিজিবির এক কর্মকর্তা। ১৬ জুন বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী কুলাউড়ায় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কর্তৃক আয়োজিত মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে তাঁর বক্তব্যে এমন তথ্য দিয়েছেন ৪৬ আলীনগর বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার সেলিম সরকার।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পৃথিমপাশা ইউনিয়নে চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত আছেন বেশ কয়েকজন চোরাকারবারী।  এদের মধ্যে গডফাদার হলো আমুলী গ্রামের হুছন আলীর ছেলে সুমন মিয়া, আলীনগর গ্রামের রইছ আলীর ছেলে আক্তার হোসেন, একই গ্রামের জায়েদ আলী। এদের গ্রেফতারের শক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সহায়তা চাইলেন তিনি। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানান তিনি। এই তিন গডফাদার ছাড়াও চোরাকারবারীদের মধ্যে রয়েছেন শিকড়িয়া গ্রামের গৌছ আলীর ছেলে মাসুম, আমুলী গ্রামের জসিম, দক্ষিণ গণকিয়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে শারমিন মিয়া ও মনাই, গনকিয়া গ্রামের চান্দু মিয়ার ছেলে দুধু মিয়া ও তোফেল মিয়া এবং একই গ্রামের লালন মিয়ার ছেলে সালাম, আশিক, দশটেকি গ্রামের জসিম, ধলিয়া গ্রামের আহাদ আলী, শামীম, জুনেদ, তাজুল সহ অনেকেই। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি পৃথিমপাশা সীমান্তে রোহিঙ্গাসহ অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সিএনজি ড্রাইভার ফরিদ, আব্দুল সাত্তারের ছেলে কালাম মিয়া ও সিদ্দিক মিয়ার ছেলে আরজদ আলীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে গত এক মাসে রোহিঙ্গাসহ অনেক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো: জাহিদ হোসেন মোল্লা, মৌলভীবাজার জেলা উপ-পরিচালক মো: হাবিব তৌহিদ ইমাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি, কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত)  মো: আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার এর উপ-পরিচালক এইচটি ইমাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ, কুলাউড়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্টাচার্য সজল, ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমদাদুল ইসলাম ভুট্টো, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন ভুইয়া, মৌলভীবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর অমর কুমার সেন, ভুকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খান সুইট, কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান, কুলাউড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আহমেদ নোমানসহ সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য-সদস্যা, ইমাম, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এক পরিসংখ্যানে জানায়, মৌলভীবাজারে গত এক বছরে মাদক নির্মূলের উদ্দেশ্যে ৬৬৬টি মামলা দায়ের, ২২৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৭৬ কেজি গাঁজা, ৯৮২৩ পিস ইয়াবা, ১১৩৬৬ লিটার দেশী-বিদেশী মদ, মাদকদ্রব্য বহনকারী ২টি সিএনজি অটোরিকশা ও ১টি মোটরসাইকেল আটক এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সবাই অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আর কাউকে করতে দেবো না ভুল/সবাই মিলে সমাজ থেকে মাদক মাদক করব নির্মূল। কর্মশালায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রায় দুইশত লোক অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *