কুলাউড়ায় গণপিটুনিতে চোর নিহত গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য ভাটেরার ভবানীপুর গ্রাম

কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে ভবানীপুর গ্রামে গত ০৪ ফেব্রæয়ারি ভোর রাতে গণপিটুনির শিকার হয়ে সোনাম (৩৫) নামক এক চোর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যায়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫ জনের নামোল্লেখ করে এবং ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করে। ঘটনার পর থেকে ভবানীপুর গ্রাম পূরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নারী শিশুরা রাতে থাকেন পুলিশ আতঙ্কে। আসামী গ্রেফতার অভিযানের নামে এলাকায় পুলিশী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ভাটেরা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে গেলে কোন পূরুষের দেখা মেলেনি। ছোট শিশুরা খেলা করলেও অপরিচত মানুষ দেখলেই পুলিশ মনে করে ভয়ে পালিয়ে যায়। ৯০ উর্ধ্বো বৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিশোর কিংবা কোন পূরুষ মানুষ গ্রামে নেই। সবাই ভয়ে আছে- যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। হত্যা মামলা জেল থেকে বের হওয়া মুশকিল হবে তাই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গোটা গ্রামেই শুনসান নিরবতা।
বৃদ্ধ জানান, ভবানীপুর গ্রামের মসজিদের মাইকসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে ২ বার। এছাড়া বাড়িতে বাড়িতে চুরির ঘটনায় তারা অতিষ্ঠ। প্রবাস ফেরৎ লোকমান হোসেন তাই নিজের বাড়িতে লাগিয়েছেন সিসিটিভি।লোকমান হোসেনের স্ত্রী ও মেয়েরা জানান, ঘটনার দিন রাতে চোর সোনাম তাদের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার ব্যাটারি চুরির চেষ্টাকালে এলাকার লোকজন তাকে ধাওয়া করে। দৌঁড়ে পালাবার সময় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলে এলাকাবাসী তাকে আটক করতে সক্ষম হন। আটক চোর সোনামকে সাবেক মেম্বার আব্দুল কাইয়ুমের উঠানে উত্তম মধ্যম দিয়ে বর্তমান মেম্বার মোখলেছুর রহমানের মাধ্যমে টহল পুলিশের এসআই আলমগীর মিয়ার নিকট সোপর্দ করেন।
এদিকে চোর সোনাম ঘটনার পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। এঘটনায় এসআই মো. আলমগীর মিয়া বাদি হয়ে ৫ জনের নামোল্লেখ করে আরও ৩০-৩৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহার নামীয় ৪ আসামীকে আটক করে জেলহাজতে প্ররণ করে। এরপর থেকেই যেন গোটা এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দেয়।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন এসআই মো: নাজমুল হাসান। এলাকাবাসীর অভিযোগ রাতে তিনি ২০-২৫ পুলিশ নিয়ে এলাকায় তল্লাশী চালান। তাল্লাশীর নামে তিনি এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন।মহিলারা জানান, পুলিশ কর্মকর্তা ধমক দিয়ে মহিলাদের ধরে নিতে এসেছেন বলেন। আসামীদের ধরে না দিলে মহিলাদের নিয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় খোঁজে পাচ্ছেন না তারা।ভাটেরা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মখলিছুর রহমান জানান, আমি ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এনে চোর সোনামকে পুলিশের হাতে তুলে দেই। এখন যে অবস্থা এলাকায়, এভাবে মানুষ হয়রানির শিকার হলে চুরি ডাকাতি হলে আর কেউ এগিয়ে আসবে না।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো: নাজমুল হাসান জানান, হত্যাকান্ডের বিষয়। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।
এব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আব্দুছ ছালেক জানান, আসামী আটকে অভিযানে গেলে রাতে বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশী চালাতে পারে। তবে নারী ও শিশুদের যাতে হয়রানি করা না হয় বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *