জুড়ীতে নদী প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজে নয় ছয় 

হারিস মোহাম্মদ:  মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী নদী প্রতিরক্ষামূলক কাজে নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্ন মানের বালু-পাথর দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে ব্লক তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ৯১টি ব্লক লাল কালিতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে বাতিল করলেও পরে অজ্ঞাত কারণে ১০টি রেখে বাকী গুলোর লাল ক্রস চিহ্ন মুছে ফেলা হয়।
সরেজমিন মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সদর জায়ফর নগর ইউনিয়নের গৌরীপুর (ভবানীপুর) এলাকা পরিদর্শনে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার-এর অধীনে ‘জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার জুড়ী নদীর বামতীর গৌরীপুর এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে’ ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ইং অর্থ বছরে “সিসিটিএফ প্রজেক্ট” এর আওতায় জুড়ী নদীর বামতীরে গৌরীপুর নামক স্থানে কিমি ১৮.৯৬৫ হতে কিমি ১৯,০৮০ পর্যন্ত ১১৫ মিটার প্রতিরক্ষামূলক কাজে ০১ আগস্ট ২০২২ তারিখে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা। ২,৩৩,৮৭,৩৮০.৯৩৬ টাকা চুক্তি মূল্যের কাজটি পেয়েছেন ঢাকা মানিকদি’র রিমি নির্মাণ লিমিটেড নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করে আসছিল। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ চৌধুরী  তছির আলী, নুরুল ইসলাম, সেবুল আহমদসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন- শুরু থেকেই ঠিকাদার কাজে অনিয়ম করছেন। বালুর বদলে রাবিশ মাটি দিয়ে ব্লক তৈরী করা হচ্ছিল। বালু নেট দিয়ে ছাকা করার কথা থাকলেও তা করা  হয়নি। গাছের পাতা, মাটি মিশ্রিত পাথর ধোয়া হয়নি। এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ১০ টুকরি পাথর ও ৬ টুকরি বালু দেয়ার কথা। কিন্তু এখানে ১২/১৩ টুকরি পাথর ও ৭/৮ টুকরি বালু দেয়া হয়। ব্লক ঢালাই দেয়ার পর ১৪ দিন রেখে পানি দেয়ার নিয়ম ছিল। পর্যাপ্ত পরিমান পানি না দিয়ে ১/২ দিন পরেই  ব্লক গুলো স্থানান্তর করা হচ্ছে। রবিবার দুপুরে টাস্কফোর্স কর্ম এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ৯১টি ব্লক বাতিল করে সবগুলোতে লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন একে দেন। টাস্কফোর্স চলে যাবার পর ১০টি ব্লক রেখে বাকী ৮১টির লাল ক্রস চিহ্ন ঘষে মুছে ফেলা হয়। পরে সে গুলোর উপরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার  পরিদর্শন কালে ঠিকাদারের লোকজন বলেন- মেশিন নষ্ট থাকায় কাজ বন্ধ।
ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজারের ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুক কাজের অনিয়ম সম্পর্কে বলেন- আমি এদিক-ওদিক থাকায় ভাল ভাবে খেয়াল করতে পারিনি।
অভিযোগ ও কাজের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিমি নির্মাণ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলামকে এলাকায় না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে দেখা করবেন বলে জানান।
অভিযোগ আমলে না নিয়ে  পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও উক্ত কাজের তদারক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন- বালু পরিবর্তন না করা, পাথর থেকে পাতা না ফেলা ও পাথর না ধোয়ায় কাজ বন্ধ রেখে ছিলাম। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কাজ শুরু করায় ভয় দেখানোর জন্য শাস্তি স্বরূপ পাথরে লাল ক্রস দেয়া হয়। পরে ১০টি রেখে বাকী গুলো মুছে দিতে বলেছি। এবং দুই দিন কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি, যাতে সংশোধন হয়ে সঠিক ভাবে কাজ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *