জন্মদিনে তারকাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত সুবর্ণা

অনলাইন ডেস্ক :

বরেণ্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। একাধারে তিনি নির্মাতা, আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক ও সংসদ সদস্য। আশির দশকে নিজেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। কিন্তু মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। জীবন থেকে পেরিয়ে গেছে ৬৩টি বছর। শুক্রবার (২রা ডিসেম্বর) চৌষট্টিতে পা দিলেন নন্দিত এই অভিনেত্রী। জন্মদিনে শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত সুবর্ণা মুস্তাফা। তার সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন অভিনেতা সাজু খাদেম। শুভেচ্ছা জানিয়ে এ অভিনেতা লিখেন, ‘শুভ জন্মদিন সুবর্ণা মুস্তাফা আফা। অকপটে সত্য কথা বলার মানুষ। অনেক খুঁজে দেবার মতো ছবি পেলাম।’ সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর প্রিয় অভিনেত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ গায়িকা বলেন, ‘প্রিয় সুবর্ণা আপা আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আপনার বুদ্ধি, অতুলনীয় প্রতিভা, ভালোবাসা এবং ইতিবাচকতার অপার শক্তির জন্য আপনার অনেক প্রশংসা করি। আপনি অনুপ্রেরণার একটি উৎস। এই জন্মদিন আপনার জীবনে আনন্দ ও সুখ বয়ে আনুক। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। সত্যি বলছি, আপনাকে অনেক ভালোবাসি।’ দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিশেষ দিনে সুবর্ণা মুস্তাফাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। শুরুতে তিনি লিখেন, ‘একজন সুবর্ণা আপা, কষ্টের সময়গুলোতে মায়া-মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন আমাকে, আমার পরিবারকে। আমি জানি, তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তুমি কি জানো আজ তোমার কাজের ৫৪ বছর! তুমি ভাবতে পারো এখনো তুমি সদর্পে কাজ করছো এই প্রজন্মের সাথে এবং তুমি আমাদের দেশের মাননীয় সংসদ সদস্য। হুম আমরা ভাবতেই পারি, কারণ তুমি যোগ্য। অভিনন্দন তোমাকে।’ জন্মদিনের কথা স্মরণ করে চয়নিকা চৌধুরী লিখেন, আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুক আলো করে এসেছিলেন আমাদের সবার প্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী শক্তিমান অভিনয়শিল্পী গোলাম মুস্তাফা এবং রেডিও অনুষ্ঠান প্রযোজক ও লেখক হোসনে আরা মুস্তাফার কন্যা। তার অভিনয় দেখে বড় হয়েছি। সাদা-কালো টিভিতে সেই ‘ইডিয়ট’ নাটক এখনো চোখের মণিতে লেগে আছে। তারপর সাদা-কালো রঙিনসহ অসংখ্য দারুণ দারুণ সব নাটক।’’ ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। প্রিয় শিল্পীর একটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন-‘শুভ জন্মদিন কিংবদন্তি। এই গ্রহের সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় তারকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আশা করি, বিশেষ এই দিন আপনার জীবনে আনন্দ, ভালোবাসা এনে দেবে। আমরা আপনাকে ভালোবাসি।’ এছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী, কচি খন্দকার, পিয়া জান্নাতুল, স্বাধীন খসরু, ফারজানা চুমকিসহ অনেক তারকাই প্রিয় শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার পৈত্রিক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে। পিতা গোলাম মুস্তাফা ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী। তার মা পাকিস্তান রেডিওতে প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন। মায়ের হাত ধরে মাত্র ৫/৬ বছর বয়সে বেতার নাটকে কাজ শুরু করেন তিনি। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত শিশুশিল্পী হিসেবে নিয়মিত টেলিভিশনে কাজ করেন এই অভিনেত্রী। সত্তর দশকে ঢাকা থিয়েটারে নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক ‘জন্ডিস’ ও ‘বিবিধ বেলুন’-এ অভিনয় করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। আশির দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তার জুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বই দশকে বরেণ্য কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘রোববার’ নামে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও খ্যাতি অর্জন করেন। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে মুনা চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা। যা এখনো দর্শক মনে গেঁথে আছে। ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শকের মনে নাড়া দেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো-‘ঘুড্ডি’ (১৯৮০), ‘নয়নের আলো’ (১৯৮৪), ‘পালাবি কোথায়’ (১৯৯৭), ‘গহীন বালুচর’ (২০১৭) প্রভৃতি। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *