বড়লেখায় স্বামীর দেয়া পেট্রোলের আগুনে পুড়ে গেছে রহিমার শরীর

বিশেষ প্রতিনিধি : শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন গৃহবধূ রহিমা বেগম (২০)। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। নিজের বাবার বাড়িতে পেট্রোলের আগুনে পুড়ে গেছে তার শরীরের ৬৩ শতাংশ। অভিযোগ উঠেছে, গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যার উদ্দেশ্যে স্বামী তার গায়ে আগুন দিয়েছে। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন রহিমা। ৪ জুলাই রোববার ভোর রাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। রহিমা এই ইউনিয়নের রফিক উদ্দিনের মেয়ে। এঘটনায় ৪ জুলাই রহিমার বাবা রফিক উদ্দিন বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার পশ্চিম হাতলিয়া এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেট্রোল ঢেলে রহিমাকে পুড়িয়েছে তার স্বামী। ঘটনার পরই পুলিশ অভিযুক্ত শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে। বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম জানান, সকাল সাতটার দিকে রহিমা বেগমকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার হাত-মুখসহ শরীরের ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে রহিমা বেগমের সাথে একই ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে শিপন আহমদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের ঝগড়া হতো। এতে স্বামী ও তার স্বজনরা রহিমাকে শারীরিক নির্যাতন করতো। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার সমাধান করে দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। এদিকে স্বামী ও তার স্বজনদের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে এক সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন রহিমা। সন্তানকে দেখার উছিলায় প্রায় শ্বশুর বাড়িতে আসতেন রহিমার স্বামী শিপন আহমদ। গত ৩ জুলাই শনিবার একই অযুহাতে শিপন রহিমার বাড়িতে আসেন। রাতে সেখানে ঘুমান তিনি। ভোররাত আনুমানিক ৫টার দিকে রহিমার চিৎকার শুনে পাশের ঘরের সবাই এগিয়ে আসলে শিপন পালিয়ে যায়। এসময় রহিমার শরীরে আগুন জ¦লছিলো। পেট্রোলের নমুনা পড়ে থাকতে দেখে ধারণা করা হচ্ছে পেট্টোল ঢেলে রহিমাকে পুড়ানো হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেন। দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রহিমার স্বামী শিপন ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই রহিমাকে নির্যাতন করতেন। বিষয়টি কয়েকবার বসে আমরা সমাধান করে দিয়েছি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। তাদের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে রহিমা বাবার বাড়িতে গিয়েও রক্ষা পেলো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *