মনিপুরীদের ১৭৮তম মহা রাসলীলা উৎসব অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার : বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের ১৭৮তম মহা রাসলীলা শেষ হয়েছে। প্রতি বছর কমলগঞ্জের মাধবপুরে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে মিল রেখে রাস পূর্ণিমা বা রাস উৎসব পালন পালন করা হয়। পৃথক ভাবে আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স ও তেতইগাঁও সানাঠাকুর মন্ডপ প্রাঙ্গণে রাসউৎসব পালিত হয়। উৎসবের সূচনা করা হয় রোববার সন্ধ্যার কিছু আগে এবং এর সমাপ্তি ঘটে ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের পর।
দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ, বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সাংস্কৃতিক ধারক মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব “রাসলীলা”। কঠোর নিরাপত্তা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্যদিয়ে ধর্মীয় লগ্ন হিসেব মতে সোমবার দূপুর ১২ টার পর ৩টি মন্ডপে রাখাল নৃত্যের মধ্যদিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে ৫ বছরের অধিক বয়সী কিশোরা রাখাল সেজে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত উম্মুক্ত স্থানে পৃথক ৩ টি কদম গাছের নীচে বাদ্যের তালে তালে বাঁশী নিয়ে নাচতে থাকে। রাখাল নৃত্যের বিভিন্ন ধাপে রাধাকৃষ্ণের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের বিভিন্ন চিত্র তোলে ধরা হয়।

সন্ধ্যায় উম্মুক্ত মঞ্চে আলোচনা ও গুনীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি প্রকৌশলী যোগেশ^র চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যন অধ্যাপক রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম কান্ত সিংহ।
মধ্যরাতে পৃথক তিনটি-মন্ডপে উৎসবের মূল উৎসব রাসলীলা শুরু অনুষ্ঠিত হয়। কিশোরী মেয়েকে কৃষ্ণের প্রিয়সী সাজিয়ে নাচতে থাকে, এরপর অপর কিশোরকে শ্রীকৃষ্ণ সেঁজে বাঁশি হাতে নিয়ে নাচে। সবশেষে রাধাকে নিয়ে একঝাঁক গোপিনীরা একত্রে নাচতে আসে মন্ডপের ভেতর। এ ভাবে সাড়ারাত নৃত্যের মাধ্যমে রাধা ও কৃষ্ণের মিলন ঘটানোর মাধ্যমে মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের পর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম কান্ত সিংহ জানান, বৈশি^ মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত আকারে পালন করা হচ্ছে। রাসলীলায় মঞ্চস্থ মণিপুরী নৃত্য শুধু কমলগঞ্জের নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্য কলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। এখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্প সমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে।

মণিপুরী ললিতকলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাস সিংহ জানান, এখানে সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এটি উৎসবে রূপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসবে যোগ দিতে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী এখানে এসেছেন। উৎসব উপলক্ষে আত্মীয় স্বজনের সাথেও তারা পরস্পর মিলিত হন। এবছর করোনায় কারনে উৎসবকে ঘিরে মিলন মেলায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *