কুলাউড়ার ১১০ ভূমিহীন পরিবার শনিবার পাচ্ছেন স্বপ্নের ঠিকানা

বিশেষ প্রতিনিধি : আর মাত্র দুই দিন বাকি। “আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার” ২৩ জানুয়ারি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে মাথা গোঁজার ঠাঁই ভূমিসহ একটি পরিপূর্ণ ঘর পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ১১০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি হচ্ছে এসব গৃহহীনদের জন্য স্বপ্নের বাড়ি। চারিদিকে ইটের দেয়াল এবং মাথার ওপরে দেওয়া হচ্ছে সবুজ টিনের ছাউনি। তাদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের ন্যায় কুলাউড়ায় নির্মিত এই ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কার্যক্রমকে সফল করতে স্থানীয় প্রশাসন বিরামহীনভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর আগে গৃহনির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) মোঃ আলী নেওয়াজ রাসেল, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। ঘরের কাজের সার্বিক তদারকি করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজরাতুন নাঈম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলী। সহযোগিতা করছেন সংশ্লিস্ট এলাকার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারবৃন্দ।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে দেখা গেছে, বাড়িগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ রঙের টিন। দুই রুমবিশিষ্ট বাড়িতে রয়েছে একটি রান্নাঘর ও টয়লেট। প্রতি চারটি ঘরের জন্য দেয়া হবে একটি করে ডিব টিউবওয়েল এবং বিদ্যুতায়নও করা হবে ঘরগুলো। বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ঘরগুলো উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তরের অপেক্ষায়।
সবজান বিবি (৫২)। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুলাউড়ার গাজিপুরে। ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে তার। মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ হয়। শুকুর মিয়া (৪০)। তার বাড়ি উত্তর কুলাউড়া এলাকায় ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে তার। স্থানীয় উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে ঝালমুড়ি বিক্রি করে তার পরিবার চালান। নির্মল দাস (৬৫)। তার বাড়ি জয়চন্ডী ইউনিয়নে। সে কুলাউড়া হাসপাতালের টিকাদানকারীর সহায়তাকারী। গৌরি দাস (৪৫)। তাঁর দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার স্বামী সিতেশ দাস। পেশায় রিকশাচালক। নিপালী দাস (৩২)। একজন স্বামী পরিত্যাক্তা। ট্রেইলারি করে তার পরিবার চালান। সবাই গৃহহীন হয়ে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন এখন সরকারি ঘর পেয়ে তারা বেজায় খুশি।
জহির আলী (৭০)। একজন ডিম বিক্রেতা। তাঁর বাড়ি উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে। সহায় সম্বলহীন জহির আলী কুলাউড়া পৌর শহরের উত্তর বাজারে ডিম বিক্রি করে পরিবার চালান। ঘরবাড়ি না থাকায় তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন থেকে। একই গ্রামের শ্রমিক ধীরেন্দ্র মালাকার (৬৫)। ৪০ বছর থেকে তিনি স্থানীয় রসেন্দ্র মালাকারের বাড়িতে বসবাস করছেন। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে সীমা মল্লিক (২৫) কুলাউড়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে এনজিও সংস্থা সূচনা প্রকল্পে কাজ করছে, আরেক মেয়ে পূর্ণিমা রাণী মল্লিক (১৯) কুলাউড়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। অভাব-অনটনের সংসারে একটি ঘর তাদের কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। খাতেবুন বেগম (৫০) নামের আরেক মহিলা প্রায় ৩০ বছর থেকে স্থানীয় চেরাগ আলীর বাড়িতে ১ মেয়েকে নিয়ে দুঃখে-কষ্টে বসবাস করছেন। কিন্তুু মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাদের সকলের ভাগ্যে বদল হয়েছে। সবাই প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জমিসহ পেলেন একটি পরিপূর্ণ পাকা ঘর। স্বপ্নের নতুন ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শেখের বেটি (শেখ হাসিনা) কারণে আমরা নতুন ঘর পাচ্ছি। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি একটি পাকা ঘর পাবো। কিন্তুু শেখের বেটির কারণে আমাদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলাম এখন আমরা নিজেদের বাড়িতে উঠবো। সেটা আমাদের কাছে একটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এখন মরার আগেও কিছুদিন শান্তিতে বাঁচতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মাথা গুজার ঠাঁই করে দিচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ১১০টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ঘরগুলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক তালিকাভুক্ত ৪৪০ ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ১১০ ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার। উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে ৪টি, জয়চন্ডীতে ৫টি, রাউৎগাঁওয়ে ১২টি, টিলাগাঁওয়ে ১৫টি, পৃথিমপাশায় ৩২ টি, কর্মধা ৩টি, শরীফপুরে ৩০টি ও হাজিপুরে ৮টি ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে এই ঘর। এর আগে কুলাউড়ায় ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপকারভোগী নির্বাচন, গৃহনির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষে গত ১২ নভেম্বর উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যদের সাথে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলী বলেন, ভূমিহীনদের জন্য ঘরগুলো নির্মাণ কাজ যখন শুরু হয় তখন থেকেই ইউএনও স্যার নিজেই উপস্থিত থেকে দেখভাল ও তদারকি করছেন। কাজের যেন কোনো অনিয়ম না হয় সেই দিকে তিনি সবসময় দৃষ্টি রাখছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে সারাদেশের ন্যায় কুলাউড়ায় ১১০ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘরনির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়। ঘরের কাজ শেষ এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের কাছে স্বপ্নের বাড়িগুলো হস্তান্তর করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান বলেন, কুলাউড়ায় গৃহহীন কোন পরিবার রাখা হবেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *