কুলাউড়ায় উপবৃত্তির ১৫ হাজার টাকার লোভে দুই শিক্ষার্থীর দেড় লক্ষ টাকা গচ্চা!

কুলাউড়া প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় উপবৃত্তি প্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বছর শিক্ষার্থীদের বিকাশ একাউন্টে প্রেরিত উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের মোবাইলে জমা হয়েছে। হ্যাকাররা গ্রামের অসহায় শিক্ষার্থীদের এসব নাম্বারে ফোন দিয়ে নানা ধরণের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বিকাশ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেয় একটি প্রতারক চক্র। এরকম দুটি ঘটনা ঘটেছে কুলাউড়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া তাবাসসুম ও হালিমা আক্তারের সাথে। উভয়েই কুলাউড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সাদিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রতাবী গ্রামের বাসিন্দা মো. ইন্তাজ আলীর মেয়ে অন্যদিকে হালিমা পৌরশহরের উত্তর জয়পাশা এলাকার মো. আহসান উল্ল্যাহর মেয়ে।
প্রতারণা শিকার হওয়া শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার জানান, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকাল ১১টায় একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে আমার বাবার ব্যবহৃত মোবাইলে (০১৭৬৬০৬৫৮২৭) নাম্বারে ফোন দিয়ে প্রতারক চক্রটি উপবৃত্তির ১৫ হাজার টাকা জমা হয়েছে বলে জানায়। এসময় উক্ত টাকা পাওয়ার জন্য আমাদের নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসে এবং এই কোড দিলে তারা টাকা পাঠাবে বলে জানায়। এরপর আবার ফোন করে বলে আমাদের নাম্বারে ১৫ হাজার টাকা আসবে না, এই টাকা পাওয়ার জন্য বিকাশ এজেন্টের কাছে যেতে হবে। তখন আমি ও আমার বাবা সাথে সাথে বিকাশ এজেন্টের কাছে যাই। সেখানে যাওয়ার পর কুলাউড়া শহরের একটি বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের (০১৯৮৯২১৪৮৮৮, ০১৭৯৮৬৩১১৩৯, ০১৯৫১০৯৫৮৯৯, ০১৭৬৬০৬৫৮২৭) নাম্বারে পর্যায়ক্রমে ২৪ হাজার ৫শত টাকা করে প্রায় ১ লক্ষ টাকা প্রদান করি। পরে বিষয়টি আমি বিকাশ অফিসে জানালে তারা থানায় অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
এদিকে ঠিক একইভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া অপর শিক্ষার্থী সাদিয়া তাবাসসুম জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে (০১৬১০-০৭২৪৬৬) নাম্বার থেকে আমার পিতার নাম্বার (০১৭৮৫-৬০০৮০৪) ফোন করে বলে আমার উপবৃত্তির ১৫ হাজার টাকা তার কাছে জমা আছে। বিকাশ এজেন্টের কাছে যাওয়ার পর ওই লোক আমাকে আমার নিজের বিকাশ নাম্বারে ২৪ হাজার ৫ শত টাকা ক্যাশ ইন করার কথা বললে আমি এজেন্টের দোকান থেকে আমার পার্সোনাল (০১৭৮৫-৬০০৮০৪) নাম্বারে ২৪ হাজার ৫শত টাকা পাঠানোর সাথে সাথে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ফেলে। পরবর্তীতে এর কিছুক্ষণ পর ওই প্রতারক চক্র ফোন করে (০১৯৮৯-২১৪৮৮৮) নাম্বারে আরও ২৪ হাজার ৫শত টাকা পাঠানোর কথা বলে। আমি আরও ২৪ হাজার ৫শত টাকা ওই নাম্বারে পাঠিয়ে দেই। টাকা পাঠানোর পর ওই প্রতারক চক্রটি আমাকে কিছুক্ষণ পর ফোন দিচ্ছে বলে ফোন রেখে দেয়। প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষায় থাকার পরও তার কোনো ফোন না পাওয়ায় তাকে উল্টো আমি ফোন দিলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি আমি বিকাশ অফিসে জানালে তারা থানায় অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, এ বিষয়ে দুটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি আরো বলেন, উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, কেউ আপনার বিকাশের কোড এবং পিন নাম্বার চাইলে দিবেন না। প্রতারক চক্র আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার হ্যাক করে টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করবে। এই বিষয়ে সকল উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আর্থিক প্রলোভনে পড়ে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে কোন আর্থিক লেনদেন না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং সচেতন থাকতে বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *