জুড়ীতে চা বিক্রেতা পিতাকে পেটালেন ছাত্রলীগ সভাপতি!

বিশেষ প্রতিনিধি : সম্প্রতি প্রবাসে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কলা খাওয়ার একটি ছবি পোস্ট করেন নাইম আহমদ নামের এক প্রবাসী। প্রবাসী নাইম মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাসিন্দা চা বিক্রেতা স্বপন মিয়ার ছেলে। ফেসবুকে কলা খাওয়ার ছবি পোস্ট করার অপরাধের দেশে প্রবাসীর পিতা স্বপন মিয়া (৫২) কে তুলে নিয়ে অন্যায়ভাবে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন সাবেল ও তাঁর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় সালিশী বৈঠক বসে কোন সমাধান না হওয়াতে গত ৫ জুন রাতে ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী চা বিক্রেতা স্বপন মিয়া। অভিযুক্ত শাহাব উদ্দিন সাবেল উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের পূর্ব ভোগতেরা গ্রামের বাসিন্দা মৃত লাল মিয়ার ছেলে ও জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। এদিকে ৬ জুন রবিবার দুপুরে জুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাবেল ও অন্যদিকে এ ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন ভূক্তভোগী স্বপন মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
জানা যায়, ভুক্তভোগী স্বপন মিয়া উপজেলার কামিনীগঞ্জ বাজারের শিশুপার্ক সংলগ্ন এলাকায় চা বিক্রির কাজ করেন। তাঁর ছেলে নাইম আহমদ মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে থাকেন। সেখানে বসে সম্প্রতি কলা খাওয়ার একটি ছবি তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। এ ছবি দেখে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাব উদ্দিন সাবেল ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি বিভিন্নভাবে নাইমকে শাসাতে থাকেন। এক পর্যায়ে সাবেল বিষয়টি তার পিতা স্বপন মিয়াকে জানিয়ে কয়েকবার হুমকি প্রদান করেন। স্বপন মিয়া তার ছেলের কলা খাওয়ার ছবি ছাড়ায় ভূল হলে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এরপর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর উপজেলার মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সাবেল তার কয়েকজন নেতাকর্মী পাঠিয়ে স্বপন মিয়াকে জোর করে মোটর সাইকেলে উঠিয়ে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত নিউমার্কেট এলাকায় নিয়ে যান। এসময় সেখানে স্বপনকে সাবেলসহ তার নেতাকর্মীরা মিলে চড় থাপ্পড়, কিল ঘুষি ও লাথি মেরে কানে ধরে উঠবস করিয়ে সাবেলের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। কোন উপায়ন্ততর না দেখে স্বপন তাঁর ছেলের বয়সী ছাত্রলীগ নেতা সাবেলের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পান। এসময় তারা এ ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে বলেন, এ ঘটনা কাউকে জানালে ফেসবুকে এ ভিডিও ছেড়ে দেবেন। পরবর্তীতে স্বপন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন এবং থানায় বিচারপ্রার্থী হন। এ ঘটনার একদিন পর শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে জুড়ী থানায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যস্থতায় সালিশী বৈঠক বসে। সালিশে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় সাবেলসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসেন স্বপন মিয়া।
ভুক্তভোগী স্বপন মিয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমার ছেলে দুই মাস পূর্বে দুবাইতে যায়। সেখানে যাওয়ার পনেরো দিন পর তার কপিল তাকে কলা দিয়েছিল খাওয়ার জন্য। সেই কলা খেয়ে খুশিতে কলার ছবি ফেসবুকে দিয়েছিল আমার ছেলে। সেই কারণে ছাত্রলীগ নেতা সাবেলের নির্দেশে হুমায়ুন, কিবরিয়া, রুহানসহ কয়েকজন লোক জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে জুড়ী নিউ মার্কেটের তিন তলায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে অন্যায়ভাবে মারধর করে সাবেলের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ায়। তিনি আরো বলেন, এক সময় সাবেলের পিতা কলা বিক্রি করতেন। এই কারণে নাকি আমার ছেলে কলার ছবি ফেসবুকে ছেড়ে তাকে অপমান করেছে। থানায় সালিশী বৈঠকেও সাবেল প্রকাশ্যে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো।

চা বিক্রেতা স্বপন মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সাবেল ও তার সহযোগীরা আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে মারধর করার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকদিন আগে আমার ছেলে প্রবাসে থেকে “কলা খাচ্ছি, আরাম পাচ্ছি” লিখে একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন ছাত্রলীগ নেতা সাবেল। বিষয়টি আমরা জেনে ছেলেকে অনেক শাসিয়েছি। পরে আমার ছেলে তাঁর নিজের ভূল বুঝতে পেরে ফেসুবক থেকে ছবিটি কেটে দেয়। এরপর আমার স্বামী সাবেলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মায়ের পা ধরে ক্ষমা চায় এবং বলে নানীগো আমাকে আপনার ছেলের হাত থেকে বাঁচান। আমার ছেলে কখনো আর এমন কাজ করবে না। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি সাবেল। সে আমার স্বামীকে তার লোকদের দিয়ে ধরে নিয়ে বেধড়কভাবে মারধর করেছে। আমরা এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন সাবেল রবিবার বিকেল ২ টা ৫৪ মিনিটে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার এলাকায় চা বিক্রেতা স্বপন মিয়ার শ্বশুরবাড়ি। স্বপনের শশুরবাড়ির লোকদের সাথে এলাকার লোকজনের জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। সেই জেরে কয়েকদিন আগে আমার এক ছোটভাই মারধর করেছে স্বপনের পক্ষের লোকজন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমি স্বপনকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করেছি মাত্র। স্বপনের ছেলে প্রবাসে থেকে কলা খেয়ে ছবি ফেসবুকে দেওয়ার কারণে নাকি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর পিতাকে মারধর করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলা খাওয়ার ছবি নিয়ে কোন বিরোধ নেই। প্রবাসী নাইম একসময় আমারও ছোটভাই ছিল। কলা নিয়ে মারধরের বিষয়টি ভুল এবং হাস্যকর। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু স্বপন সমাধান করতে রাজি হননি। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, এ ঘটনায় দু’পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *