টিসিবির পণ্যে বিয়ে-শ্রাদ্ধ! উপজেলাগুলোতে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিক্রি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : বিয়ে ও শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে টিসিবি লাইনে দাড়াচ্ছেন মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষা করে লাইনে দাড়িয়ে এসব পণ্য কিনছেন অনেকে। এই তথ্য গুলো  আঁতকে উঠার মতো মনে হলেও এটিই মাঠের চিত্র। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় শুধু দরিদ্র মানুষ নয় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে টেকে গেছে, বলছেন সচেতন মহল, ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির জন্য টিসিবির লাইনে দাড়াচ্ছেন।  সরেজমিন দেখা যায় লাইনে দাড়িয়ে টিসিবির পণ্য শুধু নিম্নবিত্ত ক্রয় করছেন না। নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাড়াচ্ছেন। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির ফলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ গুলো বাধ্য হয়ে  টিসিবি মুখি হচ্ছেন জানালেন তারা। নিজের বেঁচে থাকা ও  সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সামাজিক রীতিমতো পালন করতে গিয়ে পিষ্ট হবার মতো অবস্থা তাদের।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আলাপ হয় একজন মধ্যবিত্তের সাথে, তার ছোট একটা ফার্মেসিও রয়েছে জানালেন।  তিনি এসেছেন টিসিবির পণ্য কিনতে, সাথে পরিবারের আরও দুই সদস্য। তিনি জানান সামনে মেয়ের বিয়ে, বিয়েতে অনেক টাকা লাগবে। এরমধ্যে অতিথি আপ্যায়নে বেশি খরচ,  প্রচুর টাকার প্রয়োজন। তাই যেখানেই টিসিবির পণ্য বিক্রি হয় সেখান থেকে কিনেন কম টাকায়। এইভাবে কিনে একসাথে করে বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন  করবো,অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি জানান অনেকের অনুষ্ঠানাদিতে গিয়েছি এখন তাদের তো নিমন্ত্রণ করতে হবে। আমার অভাব এখন তাই বলে মানুষকে নিমন্ত্রণ বাদ দেওয়া যাবে না। অন্য আরও একজন এর সাথে দেখা হয়। কয়দিন আগে উনার বাবাকে বাবা হারিয়েছেন, পরিবার এর কয়েকজন সদস্য  নিয়ে এসেছেন শ্রাদ্ধের জন্য টিসিবির পণ্য কম টাকায় কিনতে। পণ্য কিনেছেন তবে জানান তিনি শুনেছেন তেল ৫ লিটার দেওয়া হবে, কিন্ত এখানে এসে পেলেন ২ লিটার। এরপরও খুশি কম দামে নিতে পেরে।তিনি জানান এ অভাব আগে ছিলো না গত দেড় বছর ধরে অভাব আঁকড়ে ধরেছে। এদিকে তেল, চি‌নি, ডা‌লসহ নিত্যপণ্যের অপরিকল্পিত প্যাকেজ হওয়ায়  বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। এ কারণে সাধারণ জনগণ ন্যায্যমূল্যে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য কিনতে আসলেও হিমশিম খেতে হচ্ছে । অভিযোগ রয়েছে  ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করে পণ্য ক্রয় করতে হয় তাদের। মৌলভীবাজার কোর্ট রোডে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাক সেলে ১০ কেজি পিঁয়াজ, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুরডাল ও ২ লি: তেল ৭ শত ৬০ টাকা প্যাকেজে পণ্যে কিনতে গিয়ে অসন্তুষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। একসাথে এতো পিঁয়াজ ও অসামঞ্জস্য প্যাকেজ তাদের সমস্যা কারন জানালেন। ক্রেতা রহমান মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ, ৫০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম, এখন দেখি প্যাকেট ৭৬০ টাকা। এতো টাকার প্যাকেট কিভাবে নিবো, টাকায় হবে না, তাই ফিরে যাচ্ছি।  শহরের রুনু ব্রম্ম বলেন, ‘আমরা তিনজনের সংসারে ১০ কেজি পিঁয়াজ নিলে নষ্ট হবে। পচনশীল পণ্য কম হলে ভালো হতো।’ অনেক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে যাওয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মহিলা ক্রেতারা জানান, বাজারে বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দাম উর্ধ্বমুখী। টিসিবির পণ্যে আমাদের মুটামুটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। কিন্তু প্যাকেজ করায় ১০ কেজি পিঁয়াজ নিতে হচ্ছে। এতো পিঁয়াজ নিলে নষ্ট হবে। ডিলার পিঁয়াজ ছাড়া অন্য পন্যও দিচ্ছেন না। তাই ফিরে যাচ্ছি।

অসামঞ্জস্য প্যাকেজের ব্যাপারে ডিলার মেসার্স অলিম্পিক এন্টারপ্রাইজ পক্ষ থেকে জানানো হয়, টিসিবির পণ্য বিক্রীতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে, এই নিয়মে মধ্যেই বিক্রি করতে হয়। আমাদের লক্ষ্য থাকে পণ্যভেদে ১৫০ থেকে ২০০ মানুষের মধ্যে পণ্য বিক্রি করতে। ক্রেতারাও সন্তুষ্ট পণ্য পেয়ে।

টি‌সি‌বির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাক থেকে ক্রেতারা পিঁয়াজ ৩০ টাকা প্রতি কেজি, চিনি ৫৫ টাকা প্রতি কেজি, মসুরডাল ৬৫ টাকা প্রতি কেজি ও তেল প্রতি লি: ১১০ টাকা মূল্যে কিনতে পারছেন।

উপজেলা পর্যায়ে চলছে আরেক রকম স্বজনপ্রীতি, কিছু কিছু ডিলার পণ্য এনে তাদের নিজের আত্মীয়-স্বজন ও নিজের এলাকার লোকদের মধ্যে বিক্রি করছেন পণ্য। উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন থেকে তদারকির কোন আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার এর সাধারণ সম্পাদক জহর লাল দত্ত জানান,  মানুষের আয়ের সাথে ব্যায়ের কোন মিল নেই।মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে টেকে গেছে। হিমশিম খেতে খেতে মানুষ হাহাকারের দিকে যাচ্ছে।  বর্তমান এমপি মন্ত্রী হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, বিভিন্ন কোম্পানির মালিকও তারা, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সাথে তাদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে এই ব্যবসায়ী এমপি মন্ত্রীরা জনগণের  যন্ত্রণা বুঝবে কি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *