কমলগঞ্জে দেবরের রহস্যজনক মামলায় প্রধান শিক্ষিকার ৩ দিন কারাভোগ; বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জের ধরে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার দেওয়া মামলায় আলমাছ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা গ্রেফতার হয়ে ৩ দিন কারাভোগ করেছেন। প্রধান শিক্ষিকার কারাভোগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বলে জানা যায়। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ভোর রাতে কমলগঞ্জ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের শ্রীনাথপুর গ্রামের পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক কামাল উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে ভোর রাতে বাসায় প্রবেশ করে হামলার ঘটনায় তার ভাবী আলমাছ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানা, ২ ছেলে তানিম চৌধুরী ও রাহিব চৌধুরীকে আসামী করে ৬ আগস্ট কমলগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছিল। থানায় দায়েরকৃত মামলায় গত ২৮ আগস্ট রাতে প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে তিনি অসুস্থ হলে রাতেই তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশি পাহারায় কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৯ আগস্ট সকালে প্রধান শিক্ষিকাকে মৌলভীবাজার আদালতে তুললে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। পরে ১ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষিকার মামলাটি জজ আদালতে নিয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাকে অস্থায়ী জামিন প্রদান করে। ২৮ আগস্ট রাতে আবার প্রধান শিক্ষিকার ছোট ছেলে কলেজ ছাত্র রাহিব চৌধুরীকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারগারে পাঠায় এবং পরে তাকে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা প্রথমিক শিক্ষা বিভাগ আলমাছ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকিাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানার বরখাস্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। তবে তিনি মাসিক ভেতন ভাতা পাবেন।

কমলগঞ্জ থানায় অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক কামাল উদ্দীন চৌধুরীর করা মামলা সূত্রে ও তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, তার বড় ভাই জামাল উদ্দীন জীবিত থাকাকালে জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেক বছর ধরে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে তার ভাবী প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানা ও তার দুই ছেলে তামিম চৌধুরী ও রাহিব চৌধুরী পরিকল্পিতভাবে তাকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে গত ৫ আগস্ট ভোর রাতে তার বাড়িতে হামলা চালান। হামলায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে গুরুতরভাবে রক্তাক্ত জখম করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটে নেওয়া হয়। তাই ঘটনার পর মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে তিনি সুবিচার প্রার্থনা করে ৬ আগস্ট কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।

আলমাছ উদ্দীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানা রোববার দুপুরে এ প্রতিনিধিকে বলেন, দেবর কামাল উদ্দীন চৌধুরী পুলিশে থাকাকালীন সময় থেকে তার বড় ভাই (প্রধান শিক্ষিকার স্বামী) জামাল উদ্দীন চৌধুরীর সাথে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ বিরোধে তিনি নিজে সু-পরিকল্পিতভাবে একটি রহস্যজনক হামলার তৈরী করে তাদেরকে ফাঁসিয়েছে। আর এ পরিকল্পনায় তার বড় ছেলে তামিম চৌধুরীর স্ত্রী প্রমি আক্তারকে তালাক দেওয়া সে দেবরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছে মিথ্যা বানোয়াট কথাবার্তা দিয়ে। তিনি জোর দাবি করেন, সরেজমিন আমার এলাকার (শ্রীনাথপুর) গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য গ্রহন করে জোর তদন্ত করলে এ রহস্যজনক মামলার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

সরেজমিন শ্রীনাথপুর গ্রামে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামবাসীরা বলেন, মরহুম জামাল উদ্দীন চৌধুরী ও ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক কামাল উদ্দীন চৌধুরীর জমি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলছে। কামাল উদ্দীন খুবই চতুর ও ভয়ানক ব্যক্তি। তাই গ্রামবাসী তাদের বিষয়ে কিছু বলতে সাহস পান না। তারও মনে করেন এ হামলাটি রহস্যজনক হবে।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক কামাল উদ্দীনের অভিযোগ এফআইআর হওয়ায় প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানার ছোট ছেলে রাহিব চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর মামলার বিষয়ে তদন্ত চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *