পরিবারের দাবি মুনাকে পুড়িয়ে মারা হয়, স্বামী কারাগারে

কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লায় রান্না ঘরে আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সেই কলেজ শিক্ষিকাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানী ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার তিনদিন পর শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার মুনাকে (৩২) পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে বুধবার রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামল দায়ের করেন মুনার ভগ্নিপতি তারেকুল ইসলাম। তারেকুল কুমিল্লা নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটরা এলাকার বাসিন্দা।মামলায় মুনার স্বামী সুমন সালাউদ্দিনকেই একমাত্র আসামি করা হয়েছে। স্ত্রীকে হত্যার মামলায় বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন স্বামী সুমন সালাউদ্দিন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান।

মুনা কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ এলাকায় অবস্থিত ‘কুমিল্লা মডেল কলেজের’ বাংলা বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তার বাবার বাড়ি কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকায়। মুনার স্বামীর বাড়ি জেলার চান্দিনা উপজেলার হারং গ্রামের ভূঁইয়া বাড়িতে। তাঁর ২ বছর ৩ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মুনার স্বামী নিজেকে নাট্যকর্মী ও আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতেন।

এদিকে সুমন সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হানিফ সরকার বলেন, সুমন সালাউদ্দিনের আদালতে আত্মসমর্পণের খবর পেয়েছি। তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছি। তবে আদালত থেকে এখনো রিমান্ড শুনানির সময় জানানো হয়নি।

দুপুরে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান বলেন, মুনার স্বামী সুমন সালাউদ্দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এখন আমাদের হেফাজতে আছেন। বিকেলে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট রাতে নগরীর রেইসকোর্সের ভাড়া বাসায় গ্যাসের আগুন প্রথমে দগ্ধ হন তিনি। এ সময় তাকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছিলেন- মুনার কোমরসহ শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ৪ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মুনা ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে কুমিল্লা মডেল কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দশম।

বুধবার রাতে থানায় হত্যা মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত সুমন সালাউদ্দিন দাবি করেন, তিনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে মুনাকে ৬ বছর আগে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে মুনার পরিবার তাদের মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে মিথ্যা মামলায় তাকে হয়রানি করে প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করছে।

মামলার বাদী তারেকুল ইসলামের দাবি, ২০১৭ সালে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয় মুনা ও সুমন সালাউদ্দিনের। সুমন সালাউদ্দিনের কোন নির্ধারিত পেশা ছিল না। বেকার জীবনযাপন করে। প্রায়ই যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী মুনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। ঘটনার দিন মুনার শরীরে কেরোসিন ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে সুমন সালাউদ্দিন। এরপর প্রচার করতে থাকে রান্না ঘরে গ্যাসের আগুনে পুড়ে মারা গেছে মুনা। আমরা তার ফাঁসি চাই। কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *