ধ্বংসের হাত থেকে পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন জুড়ীর উদীয়মান খামারি আবুল কাশেম

হারিস মোহাম্মদ: মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফর নগর ইউনিয়নের পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের উদীয়মান এক পোল্ট্রি খামারি আবুল কাশেম বংশের হাত থেকে পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । ২০০৬ সালে ১০ হাজার টাকা পুজি নিয়ে ২৭০ টি বয়লার মুরগির বাচ্চা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এর পর থেকে পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন।
 বয়লার মুরগি দিয়ে প্রথমে ফার্মের ব্যবসা  শুরু করলেও কয়েক বছরের ব্যবধানে  পুঁজি বাড়তে থাকে। এক সময় নিজেই ঔষধ, মুরগি ও খাদ্যের ব্যবসা শুরু করেন। দোকানের  নাম দেন নিরব পোল্ট্রি ফিড এন্ড চিকস্। নিরবে নিভৃতেই আবুল কাশেমের ব্যবসার উত্থান হতে থাকে। বর্তমানে তার ১৫ জন খামারি রয়েছে। নিজে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৩ হাজার লেয়ার মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন ।
গত করুনা কালীন সময়ে উদীয়মান এ পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত শতকরা ৭০ ভাগ উদ্যোক্তা  তাদের মূল পুঁজি হারিয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। ওই সময় পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুড়ী উপজেলার খামারিদের প্রায় ৫০ লাখ টাকা সরাসরি মোবাইল বিকাশের মাধ্যমে প্রণোদনা দেন। এভাবে সারা দেশের হামারিদের প্রনোদনার আওতায় আনা হয়। সরকারি প্রনোদনা এবং সুদমুক্ত ঋণ  দেওয়ার পরও সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
  উদীয়মান উদ্যোক্তা আবুল কাশেম থেমে জাননি। দিন দিন লোকসান দিয়েও পোল্ট্রি শিল্পে নিজেকে  টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তার আশা হয়তো একদিন পোল্ট্রি  শিল্পে সুদিন ফিরে আসবে।
 সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার বাছিরপুর গ্রামের খামারি  শাহজাহান ভূঁইয়া, বেলাগাও গ্রামের  ফরিদ মিয়া,জমির উদ্দিন, আব্বাস আলী, আব্দুল খালেক, আবুল কালাম, তোতা মিয়া, ওমর ফারুক,রুবেল মিয়া, ইউপি সদস্য আবুল কাশেমসহ অনেক উদ্যোক্তা আশা নিয়ে এ শিল্পে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন কিন্তু পুজি  হারিয়ে আজ সবাই নিঃস্ব  হয়ে গেছেন। ওই খামারিরা সম্পূর্ন রুপে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এ শিল্প থেকে।
খামারি ফরিদ মিয়া বলেন,পোল্ট্রি খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বড় বড় প্রাণী খাদ্যের দোকান। তিনিসহ অনেক খামারি তাদের ব্যবসার লোকসান গুনতে গুনতে ব্যাংক ও মহাজনের খাতায় আজ মোটা অংকের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন।
খামারি আব্দুল খালেক বলেন, ৩ হাজার লেয়ার মুরগির খামার করেছিলেন ৩০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।  তার ভাই তোতা মিয়া ১ হাজারের লেয়ার সেট থেকে হারিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, আবুল কালাম ১ হাজারের সেট থেকে হারিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, আব্বাস আলী ১ হাজারের সেট থেকে ১০ লাখ টাকা, জমির উদ্দিন  ২ হাজারের সেট থেকে ২০ লাখ টাকা, রুবেল মিয়া ১ হাজারের সেট থেকে ১০ লাখ টাকা, ওমর ফারুক ১হাজারের সেট থেকে ১০ লাখ টাকা, ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ২ হাজার ৫ শ’ লেয়ার মুরগির সেট থেকে ২৫ লাখ টাকা, বাছিরপুরের খামারি শাহজাহান ভূঁইয়া ২ হাজারের সেট থেকে ২০ লাখ টাকা লোকসা দিয়ছেন।
নিরব পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম জানান, প্রথমদিকে ভালই লাভ হচ্ছিল কিন্তু গত করুনা কালিন সময়ে  পোল্ট্রি শিল্পে ধশ নামে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, মুরগির মাংস ও ডিমের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে গুনতে  খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম । তিনি  বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে,বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে কোন রকম এখনও ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। আবুল কাশেম দুঃখ করে বলেন, যেখানে খামার টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার লাখ লাখ টাক প্রনোদনা দিচ্ছে সেখানে একটি মহল তার খামার বন্ধ  করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
জুড়ী উপজেলা পোল্ট্রি এসোসিয়েয়েশন সভাপতি হারিস মোহাম্মদ বলেন, জুড়ী উপজেলায় প্রায় আড়াইশ’ খামার রয়েছে। আমাদের খামার গুলোতে উৎপাদনের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। মুরগির বাচ্ছা, ঔষধ  খাদ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সেই হারে উৎপাদিত মুরগি ও ডিমের দাম তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। ৩২ টি লেয়ার খামারের মধ্যে ২৮ টি বন্ধ হয়ে গেছে। আবুল কাশেমসহ ৪ জন খামারি ধার দেনা করে খামার টিকিয়ে রেখেছেন। এগুলো বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে।   সরকার এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য খামারিদের প্রনোদনা দিয়েছে । সুদ মুক্ত ঋণও দেওয়া হয়েছে। তারপরও সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনের যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা, রমা পদ দে বলেন,আবুল কাশেমের মতো উদ্যোক্তাদের পোল্ট্রি  শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরো বলেন, গত করোনা কালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তহবিল থেকে ২৫২ জন ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারিকে ৩২ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। খামারিরা যাতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সে জন্য সহজ শর্তে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *