কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়ায় একটি হত্যা মামলার স্বাক্ষী উসমান আলী (৫৩) কে রাতের আধারে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার সকালে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের আমুলি পুঞ্জির কাছে তিন রাস্তার মোড় এলাকা থেকে উসমান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উসমান উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের নোনা টিলাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মৃত হায়দার আলীর ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী লম্বাছড়া পুঞ্জিতে বিভিন্ন ব্যক্তির পানের জুমে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। এছাড়া ওই এলাকায় তাঁর একটি পানের জুম রয়েছে।
এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে কুলাউড়া থানায় ৫জনকে আসামী ও আরো ৭-৮জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা করেন উসমান আলীর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আসামীরা হলেন কর্মধা ইউনিয়নের রাঙ্গিছড়া চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা সবুজ মিয়া (৩৫), রুমন অলমিক (৩২), লক্ষ্মীপুর এলাকার তোফায়েল আহমদ (২৫) এবং পূর্ব বাবনিয়া এলাকার লকুছ মিয়া (৪০) ও চান্দু মিয়া (৫০)। এরমধ্যে রুমন অলমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১৪ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে উসমান আলীকে স্থানীয় লম্বাছড়া পান জুম পাহারার দেবার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যান সবুজ মিয়া , রুমন লমিক, তোফায়েল আহমদ, লকুছ মিয়া ও চান্দু মিয়া। এরপর আর উসমান বাড়ি ফেরেননি। রোববার সকালের দিকে স্থানীয় কিছু লোক স্থানীয় আমুলি পুঞ্জি ও বালাইমা পুঞ্জির কাছে তিন রাস্তার মোড় এলাকায় উসমানের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। খবর পেয়ে উসমানের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উসমানের বলে শনাক্ত করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
মামলার এজাহারে ও স্থানীয় সূূত্রে আরো জানা গেছে, পানজুম নিয়ে খাসিয়া ও বাঙ্গালিদের মধ্যে বিরোধ ছিল দীর্ঘদিনের। খাসিয়ারা বাঙ্গালিদের পানজুমে পান চাষ করতে নানাভাবে বাঁধা প্রদান করে আসছে। সেই বিরোধের জেরে ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মেঘাটিলা পুঞ্জি এলাকায় কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের গুতগুতি গ্রামের বাসিন্দা এলাইছ মিয়ার ছেলে রিমন মিয়া (৩২) নামে এক পানচাষি পানজুম বিরোধের জেরে খুন হন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় রিমনের পিতা এলাইছ মিয়া বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামী হলেন আমুলি পানপুঞ্জির হেডম্যান প্রত্যুষ আশাক্রা। অন্যান্য চার্জশিটভুক্ত আসামীরা হলেন নিউ রাঙ্গি পুঞ্জির বাসিন্দা ছারলেট খংলা, সিমন, জার্মানী খং, বালাইমা পুঞ্জির হেডম্যান রিউওয়েল খংলা, ক্লাট পড়ুয়েং, স্থানীয় বাসিন্দা চান্দু মিয়া, লকুছ মিয়া, ময়না মিয়া। ওই মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী ছিলেন উসমান আলী। মামলার পর আদালতে সাক্ষ্য না দিতে খাসিয়াদের জোগসাজশে লকুছ মিয়া ও চান্দু মিয়া বিভিন্ন সময় উসমানকে হুমকি দিয়ে আসছিলো। এ ঘটনার জের ধরে ওই ব্যক্তিরা খাসিয়াদের জোগসাজশে পরিকল্পনা করে উসমান আলীকে হত্যা করেছেন বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় উসমানের মাথার পেছনে ও দুই হাতের আঙ্গুলে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। নিহত ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে রুমন অলমিককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে সে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উসমানকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। এ ঘটনায় আরো ৭-৮ জন জড়িত রয়েছে বলে সে আদালতকে জানায়। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছি।