চা শ্রমিকের সন্তানের মুখের হাসির আরেক নাম বিজয় 

হারিস মোহাম্মদ: বিজয় রুদ্র পাল নামের মতো বিজেতা এক বীর।  চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে  স্থানীয় এলাকাসহ গোটা উপজেলা জুড়ে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে জয় বাংলা ইয়ূথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর ২০১৮ সালে  সজীব ওয়াজেদ জয় ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে প্রাপ্ত ৩ লক্ষ্য টাকা দিয়ে জুড়ী উপজেলার ধামাই চা বাগানে ৬ টি কম্পিউটার  নিজের টাকা দিয়ে আরও ১টি লেপটপ ও ১ টি কম্পিউটার ক্রয় করে কম্পিউটার ল্যাব স্হাপন করেন। ওই কম্পিউটার ল্যাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বিজয়ের আলোয় আলোকিত হচ্ছে সকল চা বাগানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তরুণ তরুণীরা।
চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান বিজয় নিজেকে প্রমাণ করেছেন এক আলোকবর্তিকা হিসেবে। কোন একসময় বিজয় ছিলেন অবহেলার পাত্র সেই বিজয় আজ আলো ছড়িয়েছেন চা জনগোষ্ঠীর মাঝে। তিনি চা জনগোষ্ঠীর মাঝে আলো ছড়াতে  গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতামূলক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষাএগিয়ে যাচ্ছেন। বিজয় কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ইতিমধ্যেই  লাভ করেছেন “জয় বাংলা ইয়ূথ অ্যাওয়ার্ড”।
জানা গেছে, বিজয় রুদ্র পাল বাইসাইকেল মেকানিক দুখিয়া রুদ্র পাল ও চা শ্রমিক শিলা রানী পালে পুত্র। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া বিজয়ের ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। অভাব অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপরও থেমে যায়নি সে! সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আপন গতিতে চলেছেন স্বপ্নের ঠিকানার দুর্গম পথে। ছোটবেলা থেকে তাঁর স্বপ্ন ছিল চা শ্রমিক পরিবারের দরিদ্র সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিতসহ তাদের সমাজের কল্যাণ মুখী করে গড়ে তোলার।শপথ করে ছিলেন অর্থের অভাবে যেন কারো পড়ালেখা বন্ধ না হয়।
চা বাগানের ছেলে-মেয়েরা যেন শিক্ষার আলোয় গড়ে তোলতে পারে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সেই লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। চা বাগানের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ছোট ধামাই আইডিয়াল একাডেমি। নিজের প্রতিষ্ঠিত স্কুলে বিনা মূল্যে ও স্বল্পমূল্যে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি এলাকার সচেতন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন ধামাই চা বাগান উচ্চ বিদ্যালয়।
বিজয় রুদ্র পাল বলেন, ২০০২ সালে অনেক অভাব অনটনের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করি। পরীক্ষায় পাস করলে কী হবে, দারিদ্র্য কভু পিছু ছাড়েনি আমার। তাই বাবার সঙ্গে সাইকেল মেকানিকের কাজ, মায়ের সঙ্গে চা বাগানের কাজ, অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করেছি। ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করে ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর মিউটেশন কাম-সার্টিফিকেট সহকারী হিসেবে জুড়ী উপজেলা ভূমি অফিসে যোগদান করি। চাকরির পাশাপাশি সিলেট এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করি। ৯২ টি চা বাগানের এস এস সি ও এইচ এস সি উত্তীর্ণ জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের পুরস্কার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। অর্থের অভাবে যারা ভর্তি হতে পারছেনা তাদেরকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কলারশিপ নিয়ে ৩৭ জন চা শ্রমিক সন্তান ফ্রি পড়াশোনা  করছেন। এছাড়াও
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর চা শ্রমিকদের চারজন সন্তান পড়াশোনার  সুযোগ পাচ্ছেন । এতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫ নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রমেশ গোয়ালা, সাংবাদিক সজল-ছাত্রী, মিন্টু দেশোয়ার, বিজয় রুদ্র পালসহ অনেকেই সহযোগিতা  করছেন।
জুড়ী উপজেলার চা জনগোষ্ঠীর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য বিজয় গড়ে তুলেছেন স্বপ্নকুঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থা। এ সংস্থার মাধ্যমে বিজয় শিলা মেধাবৃত্তি প্রকল্প, ছোট ধামাই আইডিয়াল একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং, স্বপ্নকুঁড়ি পাঠাগার এবং স্বপ্নকুঁড়ি কম্পিউটার ল্যাব পরিচালনা করে আসছেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা দিতে বিজয় ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেন। আর তিনি নিজেই সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। সকলের সহযোগিতায় বিজয় আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে চান।
 আলোকিত করতে চান সকল চা বাগানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *