মাহফুজ শাকিল: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের সেই আলোচিত বাইশালী টিলায় জঙ্গি আস্তানার পর নতুন আস্তানার সন্ধানে কালাপাহাড়ে অভিযানে নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ৬টায় আটক জঙ্গিদের মধ্য থেকে দুইজনকে সাথে নিয়ে সিটিটিসি’র প্রধান মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে টানা ৬ ঘন্টার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সোয়াট, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ, কুলাউড়া থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রায় শতাধিক সদস্য ছিলেন।
অভিযানে নতুন একটি আস্তানার সন্ধান মিলেছে বলে সিটিটিসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া সেখানে কয়েকটি তাবু টাঙানো ছিল, জঙ্গল ও গাছপালা কেটে
পরিস্কার করে আরো কয়েকটি ঘর তৈরির প্রস্তুতিও চলছিল বলে জানা গেছে।
অভিযানে আটক জঙ্গি সদস্য জামিলের স্বীকারোক্তিতে কালাপাহাড়ের ছাতাচূড়াঁ এলাকায় তাদের তৈরি নতুন আরেকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলে । এসময় ওই আস্তানা থেকে ৫-৬ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য ও আস্তানার পাশে মাটির নিচের গর্ত থেকে ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি পাওয়া যায়।
এদিকে সোমবার আটক জঙ্গি সদস্যদের ব্যাগ তল্লাশি করে ৯৫টি ডেটোনেটর, তিনটি দা (বটি) ও নগদ দুইলাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ চা বাগান সংলগ্ন খেলার মাঠ থেকে স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশার ৫ চালকের বুদ্ধিমত্তায় ১৭ জনকে অপিরিচিত ব্যক্তিকে জঙ্গি
সন্দেহে আটক করে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসলে কুলাউড়া থানা পুলিশ তাদের আটক করে পরিষদের হলরুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মো: আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে আসেন। প্রায় আড়াইঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের পুলিশী পাহাড়ায় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক ওই ১৭ জনের মধ্যে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিম ছাড়া বাকিরা হলেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার জুয়েল মাহমুদ (২৮), পাবনার সাঁথিয়ার আবির হোসেন (২০), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪), যশোর সদরের মোল্লাপাড়ার ফাহিম খান (১৭), জামালপুরের বকশীগঞ্জের সোলাইমান (১৯), পাবনার আতাইকুলার আল মামুন ইসলাম (২০), রফিকুল ইসলাম (৩৮), কক্সবাজারের রামুর সাদমান আরেফিন ওরফে ফাহিম (২১), ইরতেজা হাসনাত ওরফে লাবিব (১৯), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাহাত মণ্ডল (২৪), মাদারীপুরের পূর্ব চিরাইপাড়ার মেহেদী হাসান (২৩), সাতক্ষীরার তালার জুয়েল শেখ (২৪), বগুড়ার সারিয়াকান্দির আশিদুল ইসলাম (২৯), পাবনার আতাইকুলার মামুন ইসলাম (১৯), ঝিনাইদহ সদরের ছয়াছিলের তানজিল রানা (২৪) ও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর কোয়েল (২৪)।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো: আসাদুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার নতুন আস্তানার সন্ধানে কালাপাহাড়ের ভেতরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। টানা ৪ ঘন্টা পায়ে হেঁটে কালাপাহাড়ে গিয়ে নতুন একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাই।
সেই আস্তানার ঘরের পাশে মাটির নিচ থেকে ১৪ রাউন্ড গুলি ও ৫-৬ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির দিনে এই কালাপাহাড়ের ভেতরে যেতে আমাদের টিমকে ছোট-বড় ১৫-২০টি টিলা- পাহাড়, ছড়া, খাল অতিক্রম করে অভিযান করতে হয়। সেখানে আটক জঙ্গি সদস্য জামিল তার স্বীকারোক্তিতে আমাদের জানায়, তারা পূর্ব টাট্টিউলী এলাকার বাইশালী টিলার সেই জঙ্গি আস্তানায় সবসময় যাওয়া আসা করতো। আর বাইশালী টিলার জঙ্গি আস্তানার সদস্যরা কালাপাহাড়ের ভিতরের আস্তানায় আসতো।
মঙ্গলবার রাতে সিটিটিসি প্রধান মো: আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের
বলেন, আটক জঙ্গি সদস্যদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। তন্মধ্যে চিকিৎসক সোহেল তানজিম, চায়নায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই জন ইঞ্জিনিয়ার ও নটরডম কলেজের ছাত্র ফাহিম রয়েছেন৷
পাহাড়ের গহীনে কিভাবে জঙ্গিরা আস্থানা করে আত্মগোপনে ছিল এবং তাদের ভবিষ্যৎ মূল পরিকল্পনা কি ছিল সেটি পুরো তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। ঢাকায় নিয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে একদম নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিল কিন্তু গত ৭ আগস্ট ঢাকা থেকে ১০ জন, ১২ আগস্ট কুলাউড়া থেকে ১০ জন ও ১৪ আগস্ট স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আরো ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে মৌলভীবাজারে জেলা পুলিশ লাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিটিটিসি প্রধান মো: আসাদুজ্জামান। এসময় তিনি কর্মধার স্থানীয় সিএনজি চালকদের বুদ্ধিমত্তার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান, সিটিটিসি ডেপুটি কমিশনার নাজমুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি মোহসিন, কুলাউড়া থানার ওসি মো: আব্দুস ছালেক সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সংবাদ সম্মেলন শেষে আটক জঙ্গি সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।