কুলাউড়ায় সেই এতিম বাচ্চাদের খাবার পাঠালেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার

বিশেষ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সদ্য প্রয়াত দিনমজুর আতিক মিয়ার অসহায় পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসনের পর এবার এগিয়ে এসেছেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো: ফারুক আহমদ পিপিএম-বার। প্রাথমিক সহযোগীতা হিসেবে ওই পরিবারের শিশুদের জন্য তিনি খাবার সামগ্রী পাঠালেন। এছাড়া আরো অনেকে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মরহুম আতিক মিয়ার অসহায় পরিবারের উপর একটি মানবিক প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। শনিবার এই মানবিক প্রতিবেদনটি মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো: ফারুক আহমদের নজরে আসে। এরপর তিনি তাঁর উদ্যোগে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে (১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি পেয়াজ,  ৫ কেজি সয়াবিন তেল, ২ কেজি আলু, ৫ প্যাকেট বিরানী (পোলাও) প্রদান করেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষে উপহার সামগ্রীগুলো কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় সাংবাতিব মাহফুজ শাকিলকে সাথে নিয়ে সদ:প্রয়াত আতিক মিয়ার বাড়িতে পৌছে দেন। এসময় কুলাউড়া থানার এসআই আব্দুর রহিম জিবান, আতিক মিয়ার বড়ভাই এলাই মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এসময় ওসি বিনয় ভূষণ রায় ওই পরিবারের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।

উল্লেখ্য,  কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আতিক মিয়া (৫৪) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় গত ২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোরে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। মৃত্যুর সময় আতিক মিয়া স্ত্রী রফনা বেগমসহ তিন সন্তান আয়েশা বেগম (৮) তানজিনা বেগম (৪) ও রাফি মিয়া (২) রেখে যান। সরেজমিন ওই বাড়িতে গেলে আতিক মিয়ার চার বছরের শিশুকন্যা তানজিনাকে বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করলে সে বলে ওঠে, ‘আব্বা আল্লাহর বাড়ি গেছোইন, আমরার লাগি পোলাও লইয়া আইবা।’

বাবা হারানো তানজিনার দৃষ্টিতে এখন শুধুই অজানা এক বিস্ময়ের ছাপ। এদিক সেদিক তাকিয়ে যেনো বাবার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। সে হয়তো বুঝতেই পারেনি তার বাবা এখন না ফেরার দেশে চিরঘুমে রয়েছেন। আর কখনো তার বাবা পোলাও নিয়ে আসবেন না। বাবার কথা চিন্তা করে বার বার মুর্চা যাচ্ছে চার বছরের ছোট্ট এই শিশুটি।

বাবাকে হারিয়ে ওই তিন শিশু এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের কান্না যেন আর থামছে না, বাবাকে হারিয়ে তারা বিলাপ করছে, অবুঝ এই শিশুদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। শিশু তিনটির কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে তাঁদেরও। ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, তাদের বসতভিটায় মাটির ঘরের জীর্ণ দেয়াল ধসে যাওয়ার উপক্রম এবং টিনের চালাও নষ্ট হয়ে গেছে দীর্ঘদিন থেকে। বিশাল ছিদ্র হয়ে গেছে টিনের চালায়। ঘরে নেই কোন বিছানা, তাই মাটির মেঝেতে সন্তানদের নিয়ে শীতের এই প্রকটের সময় রাত্রীযাপন করছেন রফনা বেগম। স্বামী আতিক মিয়ার রেখে যাওয়া জীর্ণঘরসহ ছোট্ট একটি ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই। স্বামী মারা যাওয়ার দিন ঘরে কোন খাবার ছিলোনা। গ্রামের মানুষের দেওয়া সহযোগিতায় সন্তানদের আহার জুটে।

আতিক মিয়ার স্ত্রী রফনা বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর হিসেবে রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনমতে সংসার চালাতেন। কিন্তুু মহামারি করোনার থাবায় কোন কাজ না থাকায় বেকার হয়ে যান তিনি। গত একমাস ধরে হৃদরোগে (হার্টের ছিদ্র) আক্রান্ত হয়ে টাকার অভাবে সুচিকিৎসাও করতে না পারায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে আমাদের পরিবার দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে কোনমতে চলছিলো।

মরহুম আতিক মিয়ার বড়ভাই এলাই মিয়া বলেন, আমার প্রয়াত ভাইয়ের রেখে যাওয়া তিন সন্তানদের জন্য এসপি মহোদয় খাবার সামগ্রী পাঠিয়ে যে মহানুভবতা দেখালেন তার জন্য আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

কুলাউড়ার সেই এতিম শিশুরা পাচ্ছে সরকারী ঘর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *