রিপন দে :: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মাছ চাষে প্রভাব পড়েছে। দেশী মাছ হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া। শীত বর্ষাসহ ৬ ধৃতুর পরিবর্তন সঠিক সময়ে না হওয়া, খাল বিল পুকুর নদী ভরাট ও মাছের প্রজনন স্থান নষ্ট হওয়ার কারণে হুমকির মুখে পরেছে দেশী মাছের অস্থিত্ব।
২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েগেছে বেশ কয়েকটি প্রজাতি, বিপন্ন হয়ে গেছে ২৮ প্রজাতি , সংকটাপন্ন ১৪ প্রজাতি এবং অতি সংকটাপন্ন ১২ প্রজাতির দেশীয় মাছ।
দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগ। তবে এই ক্ষেত্রে বড় বাধা জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট সমস্যা। এবার মৎস্য বিভাগ জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। “কমিউনিটি বেজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট” নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের অধিনে প্রথম বার মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার হাকালুকি হাওড়ের আগদার বিল, সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওড় ও সাংহাই হাওড়, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওড় ও পিংলার হাওড়, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার মেদির হাওরে জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হবে।
এই লক্ষে ২৯ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের একটি তারকা হোটেলে কমিউনিটি বেজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট প্রকল্পের ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফান্ড (GEF) এর অর্থায়নে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর কারিগরি সহায়তায় মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “কমিউনিটি বেইজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ এন্ড একুয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রকল্পের উত্তর পূর্ব হাওড় অঞ্চলের এই ওরিয়েন্টশন ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালায় মৎস্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক জনাব এস এম মহিব উল্লাহ্ এর সভাপতিত্বে উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আরিফ।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী মৌলভীবাজারের সিনিয়র মতস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে জানান, জলবায়ুর কারণে সে সব প্রভাব পরেছে তা মুখাবেলা করতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হলেও যেনো মা মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করা যায়। ভরাটকৃত খাল বিল খনন করা। পরিবর্তীত আবওয়ার সাথে মিল রেখে চাষ পদ্ধতি ঠিক রাখাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতিতে চাষে ফিরে আসবে দেশী মাছের সুদিন
এছাড়াও উক্ত কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর ন্যাশনাল অপারেশনস অফিসার নুরুন নাহার বেগম। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন উক্ত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সমীর কুমার সরকার। প্রজেক্ট ওরিয়েন্টশন এবং কমিউনিটি বেইজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ এন্ড একুয়াকালচার বিষয়ে টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন যথাক্রমে FAO এর ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডঃ আবুল হাসনাত এবং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট এক্সপার্ট জনাব উম্মে কুলসুম।
প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি উক্ত প্রকল্প মৎস্যজীবি ও মৎস্যচাষিদের জলবায়ু সহনশীল বিভিন্ন চাষ এবং নারীদের পারিবারিক আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা সহ মৎস্য অধিদপ্তরের কেপাসিটি বিল্ডিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।