কুলাউড়ায় ভোটের মাঠে ৫৬ চেয়ারম্যান প্রার্থীর লড়াই

বিশেষ প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। গেলবার দুই ধাপে নির্বাচন হলেও এবার একসাথে সবক’টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য পদে ১৬১ জন, সাধারণ আসনে সদস্য পদে ৪৮৩ জন ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে এবার ২জন নৌকা পান। নৌকা বঞ্চিত এক বর্তমান চেয়ারম্যানসহ আওয়ামীলীগের ৩জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামীলীগ,বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ৭/৮ জন প্রবাসী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
অপরদিকে বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ না নিলেও গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী ৩ জন চেয়ারম্যান এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে করছেন। অন্যদিকে বিএনপি ঘরনার আরো ২জন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ১জন সাবেক চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেন। সবমিলিয়ে বিএনপি ঘরনার ১১ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। তবে তাদের প্রচারণার পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন। অনেকটা নীরবেই সুনসান পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন বলে তারা দাবি করেন। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি ঘরনার বেশ কয়েকজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তাঁরা আশা করছেন নিজেদের ব্যক্তি ইমেজ ও দলীয় প্রতীক বিদ্বেষী জনরায়কে কাজে লাগিয়ে চমক দেখাবেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৪ জন চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। তবে এবার এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে দাবি আওয়ামীলীগ সমর্থকদের। তফসীল অনুযায়ী ১২ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্ধের পর প্রার্থীরা জোরেসোরে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। নির্ধারিত সময়ে মাইকিংয়ে প্রচারণার বাইরেও সকাল থেকে রাত অবধি প্রার্থী ও প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করে ভোট প্রার্থনা চলছে। প্রতিদিন সবক’টি ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার ও চায়ের দোকান এখন ভোটের আলাপে সরগরম হয়েছে। প্রার্থীদের পক্ষে এখন আর চা বিস্কুটে সীমাবদ্ধ নয় প্রতিদিন রাতেই নির্বাচনী অফিসগুলোতে ভোনা খিচুরী খাওয়ার আয়োজন করা হয়। এদিকে প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগও রয়েছে। প্রশাসন নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করছে।
উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে গত নির্বাচনে আ’লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাহান। তিনি মৃত্যুবরণ করলে ওই ইউনিয়নে গত ডিসেম্বরে উপ-নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাতা সভাপতি মরহুম আব্দুল লতিফ খানের ছেলে খোরশেদ আলম খান সুইট। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন চাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (চশমা) প্রতীকে ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হলেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন খসরু। তিনি এবার প্রথম বারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
ভূকশিমইল ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হওয়া চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির এবার স্বতন্ত্র (আনারস) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নবীন প্রার্থী মইনুল ইসলাম সোহাগ (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল আজিজ (লাঙ্গল) প্রতীকে লড়ছেন।
ভাটেরা ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হওয়া চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম এবার নৌকা থেকে বঞ্চিত হন। এই ইউনিয়নে এবার আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী জুবায়ের আহমদ সেলিম। তিনি ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আজীবন সভাপতি মরহুম আকমল আলী সিদ্দিকীর ছেলে। তিনি ভাটেরা ইউনিয়ন আ’লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও ভাটেরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল ইবনে শহীদ চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০০৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প ভোটে পরাজিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোঃ আব্দুল লতিফ খান (ঘোড়া) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন।
জয়চন্ডী ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বর্তমান চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু (আনারস) এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি এই ইউনিয়নের টানা তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এই ইউনিয়নে দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হলেন জয়চন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব মাহাবুব।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মমদুদ হোসেন এবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রবাসী খান ময়নুল হোসেন (আনারস) ও সৌদি আরব প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন এলাইছ (চশমা) এবং ব্যবসায়ী আকুল মিয়া (অটোরিকশা) প্রতীকে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
কাদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হন জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ঠিকাদার জাফর আহমদ গিলমান। গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হওয়া চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম (মোটরসাইকেল) এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়াও উপজেলা বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক আব্দুল মুহিত বাবলু (আনারস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান খাঁন (চশমা) ও মোঃ জসিম উদ্দিন (অটোরিকশা) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন।
কুলাউড়া সদরে বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলি এবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) প্রতীকে নির্বাচনে ভোটের মাঠে তৎপর। তিনি কুলাউড়ায় ভোটের মাঠে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোছাদ্দিক আহমদ নোমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জুবের আহমদ খান (চশমা) ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী (মোটরসাইকেল) ভোটের মাঠে রয়েছেন।
রাউৎগাঁও ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল জামাল। তিনি এবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি এই ইউনিয়নে টানা দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী হন আকবর আলী সোহাগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবাসী সৈয়দ ইকবাল ছালাম (ঘোড়া), এনামুল হক মাহতাব (চশমা) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জামিলুর রহমান চৌধুরী (হাতপাখা) প্রতীকে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
টিলাগাঁও ইউনিয়নে গত নির্বাচনে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন আব্দুল মালিক। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন চাননি। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই ইউনিয়নে দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি ঘরনার মোঃ হারুন মিয়া (মোটরসাইকেল) প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওয়াকিব মিয়া (হাতপাখা), কামাল মিয়া (রজনী গন্ধা) ও মোহাম্মদ আবুল মিয়া (টেলিফোন) প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
হাজিপুর ইউনিয়নে গত নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন প্রেসক্লাব কুলাউড়ার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত বাচ্চু। তিনি এই ইউনিয়নে এবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) প্রতীকে নির্বাচনে ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন। এই ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মাহমুদ আলী (আনারস), দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ওয়াদুদ বক্স (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়ছর মিয়া (মোটরসাইকেল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবুল কাশেম (হাতপাখা) ও মোঃ নাজিম উদ্দিন (চশমা) প্রতীকে ভোটের মাঠে লড়ছেন।
শরীফপুর ইউনিয়নে গত নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হওয়া চেয়ারম্যান জনাব আলী (আনারস) এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ চিনু মিয়া ভোটের মাঠে তৎপর। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ খলিলুর রহমান (চশমা), ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জামাল উদ্দিন (মোটরসাইকেল) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আকমল (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নে গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নবাব আলী বাকর খান হাসনাইন। তিনি এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী (চশমা) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই ইউনিয়নের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল লতিফ (আনারস) প্রতীকে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এছাড়াও এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক ৫বারের মেম্বার মোঃ আব্দুল মন্নাফ (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুল (অটোরিকশা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ আব্দুল গাফুর (হাতপাখা) প্রতীকে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
কর্মধা ইউনিয়নে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম এ রহমান আতিক। তিনি এবারো নৌকা প্রতীক পেয়ে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। এই ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন মুহিবুল ইসলাম আজাদ। তিনি এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উসমান গণির ছেলে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম (ঘোড়া) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তিনি গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মছলু আমিন (আনারস) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হেলাল মিয়া (হাতপাখা) প্রতীকে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার মোঃ আহসান ইকবাল বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ৭০০ জন প্রার্থী প্রতীক পাওয়ার পর ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে তারা প্রচারণা চালাবেন। তিনি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে গণমাধ্যমকর্মীসহ কুলাউড়াবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *