রাত পোহালেই মৌলভীবাজারে জেলা পরিষদ নির্বাচন

বিশেষ প্রতিনিধি :  মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মিছবাহুর রহমানের কোনো প্রতিদ্বন্ধিতা না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ কারণে মৌলভীবাজারে চেয়ারম্যান বিহীন ভোটের আমেজ কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু সদস্য পদে নির্বাচন শেষ মুহুর্তে এসে জমে উঠেছে। ভোটারদের কদরও বেড়েছে। বেড়েছে সাদা আর কালো টাকার অবাধ ছড়াছড়ি। ৫০ থেকে এক লাখ টাকায় ভোট কেনা বেচার গুঞ্জন রয়েছে।

১৭ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠেয় ভোটে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৮ জন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন ছাড়া বাকি সবই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ডে ৭ জন নারী এবং ৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ৭ উপজেলায় ৭টি কেন্দ্র করা হয়েছে। জেলায় ভোটার ৯ শত ৫৭ জন রয়েছেন। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানা এব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, জেলা ৭টা কেন্দ্রে ২টি করে কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেই দুটি কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আমার অফিসের মোবাইল থেকে তা মনিটরিং করা হবে। তাছাড়া একটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সুতরাং এখানে সামান্যতম কিছুর সুযোগ থাকছে না।

কুলাউড়া: মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩নং ওয়ার্ড কুলাউড়া উপজেলায় সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। আগাম বলা যাচ্ছেনা কে নির্বাচিত হচ্ছেন।

৩নং ওয়ার্ড কুলাউড়া আসনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য সেলিম আহমদ ও মাহবুবুর রহমান মান্না। এছাড়া কুলাউড়া পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার ইকবাল আহমদ শামীম, ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু ও দৈনিক সমকালের কুলাউড়া প্রতিনিধি সৈয়দ আশফাক তানভীর।

কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ, ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ৩নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৮৫ জন। প্রার্থীদের মাঝে ভোট কিনে বিজয়ী হওয়ার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে কুলাউড়া জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা নিয়ে সংরক্ষিত আসন -০১। এই আসনে লড়ছেন ৩ নারী প্রার্থী। তারা হলে বর্তমান সদস্য শিরীন আক্তার মুন্নি ও জোবেদা ইকবাল। তাদের সাথে অপর প্রতিদ্বন্দ্বি হলেন রেহানা পারভীন। কুলাউড়ায় ১৮৫, জুড়ীতে ৮১ এবং বড়লেখা উপজেলায় ১৪৬ ভোট মিলিয়ে ৪১২ জন ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নারী প্রার্থীরা। ভোটারদের মধ্যে বর্তমান ২ সদস্যকে নিয়েই চলছে আলোচনা।

কুলাউড়া নবীন চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বড়লেখা নারী শিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কাঠালতলী ও জুড়ী উপজেলার দক্ষিণ জাঙ্গিরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ করা হবে।

মৌলভীবাজারের জেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিযুক্ত থাকবে। কোন গুজবে কান দিয়ে লাভ নেই। পুরো জেলায় ভোট ইভিএমে ভোট হবে।

জুড়ী: ২নং ওয়ার্ড জুড়ী উপজেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি সদস্যরা ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কে হাসবেন শেষ হাসি, এ নিয়ে উপজেলায় চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। সোমবার শেষ হবে এ ভোটারসহ সাধারণ জনগণের আগ্রহের প্রহরগুনা।

জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন জুড়ী উপজেলার প্রধান আলোচনা হিসাবে হাট-বাজারসহ চায়ের দোকানে চলছে রাতদিন আলোচনা। পিছিয়ে নেই মিডিয়া পাড়াও। জেলা পরিষদ নির্বাচনে এ উপজেলা থেকে সদস্য পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বদরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম ইমন।

তবে তিন জন প্রার্থীরা মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন দু’জন। তারা হলেন মোঃ বদরুল ইসলাম ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। গত ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। এ নির্বাচনে মোঃ বদরুল ইসলাম ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছিলেন ২৪ ভোট।

১৭ অক্টোবরের নির্বাচনের হিসাব নিকাশের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থী স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নিকট চষে বেড়াচ্ছেন। এদের দু’জনের মধ্যে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি এনিয়ে আগ্রহের কমতি নেই উপজেলার জনগণের মধ্যে। নিজেদের অনুকূলে মতামত পাবার জন্য দু’জনই বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি তাঁরা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচিত হলে কি কি উন্নয়ন করবেন তা তুলে ধরে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন।

জুড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত করা হয়েছে জেলা পরিষদের ২নং ওয়ার্ড। ৬ টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা পরিষদের ৩ জনপ্রতিনিধি মিলিয়ে ৮১ টি ভোট রয়েছে। তবে একজন ইউপি সদস্য মারা যাওয়ায় ভোট দেবেন ৮০ জন ভোটার। আগামী ১৭ অক্টোবর উপজেলার দক্ষিণ জাঙ্গীরাই মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদের এ নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচনকে ঘীরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।

আলাপকালে বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, এবারের নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আমরা যাকে সব সময় পাশে পাব, যে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব‌‌।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বদরুল ইসলাম বলেন, গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে আমি এ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। জেলা পরিষদ থেকে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ১৬ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দ এনে জুড়ী উপজেলার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। আমার সাথে ভোটারসহ উপজেলার আপামর জনসাধারণের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর ভোটারদের রায় আমার পক্ষে আসবে ইনশাআল্লাহ।

অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি দীর্ঘ দিন থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। জুড়ী উপজেলার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এবার জনপ্রতিনিধিরা আমাকেই ভোট দিবেন ইনশাআল্লাহ। আলাপকালে আরেক সদস্য প্রার্থী আব্দুল হেকিম ইমন জানান, আমি এ বারের ভোটে চমক দেখাব।

নির্বাচনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন সহ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

কমলগঞ্জ: কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ ওয়ার্ডে সদস্য পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। সদস্য পদে কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রতিদ্বন্দিতাকারী প্রার্থীরা হলেন- মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: হেলাল উদ্দিন (তালা), বিকাশ চন্দ্র পাল (হাতি), মো: তোফায়েল করিম চৌধুরী রুমেল (অটোরিকশা) ও মো: মবশ্বির আলী (টিউবওয়েল)। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য আসেন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত সদস্য তফাদার রিজুয়ানা ইয়াসমিন সুমি (বই) ও হেলেনা চৌধুরী (বল)।

নির্বাচনে কমলগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা পরিষদ, ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের ১৩৩ জন জনপ্রতিনিধি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট প্রদান করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *