কুলাউড়ায় দেড় মাসেও স্কুলছাত্রী ফাহমিদা মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় দেড় মাস আগে বসতবাড়ির পাশের ডোবা থেকে স্কুল ছাত্রী দিলরুবা জান্নাত ফাহমিদা (১১) নামে  এক স্কুল শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের বিষয়টি এখনো রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি।

ফাহমিদা উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের আকমল মিয়ার ছোট মেয়ে এবং স্থানীয় রাউৎগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো।

এদিকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ফাহমিদার মা ছইফা বেগম ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কালামের ছেলে শাহাজানকে প্রধান অভিযুক্ত করে আদালতে একটি হত্যা মামলা (নং-৪৫৯/২২, তারিখঃ ১৯/০৯/২০২২) দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামীরা হলেন-আবু বক্কর শাহাজানের মাতা রাবিয়া বেগম (৪৮), শাহাজানের ভগ্নিপতি ও ওই এলাকার বাসিন্দার আব্দুল ওদুদ (৩০), শাহাজানের চাচি সেলিনা বেগম (৩৫) ও চাচাতো বোন শারমিন বেগম (২৬)।

আদালতে দায়ের করা এজাহার ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফাহমিদা তার বড় বোন নাঈমাসহ সকাল ৮টায় পাশের বাড়ির বাসিন্দা আবু বক্কর শাহাজানের দোকানে চিনি আনতে যায়। এসময় নাঈমার কাছে চিনি দিয়ে ফাহমিদাকে শাহাজান তাঁর মায়ের সাথে দরকারের অজুহাত দেখিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। প্রায় এক ঘন্টা পর ফাহমিদা বাড়িতে না ফেরায় শাহাজানের বাড়িতে গিয়ে তাকে (ফাহমিদাকে) পাওয়া যায়নি। ফাহমিদার বিষয়টি জানতে চাইলে শাহাজানের কর্থবার্তায় অসংলগ্নতা পাওয়া যায়। এ সময় শাহাজানের শরীর ভেজা ও কাঁদা লাগানো ছিলো। পরে ফাহমিদার বাবা আকমল মিয়া ও মা ছইফাসহ পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি করে বাড়ির পাশে একটি ডোবায় কাঁদার মধ্যে তার (ফাহমিদার) মরদেহ দেখতে পান। বিষয়টি পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলামসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।

এদিকে ফাহমিদার মরদেহ উদ্ধারের খবরে শাহাজান ও তাঁর মা রাবিয়া বেগম বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরদিন তাদের স্বজন  আব্দুল ওদুদ, সেলিনা বেগম ও শারমিন বেগম গা ঢাকা দেন। সবার অজান্তে তারা গা ঢাকা দিলে লোকজন ও ফাহমিদার পরিবারের সন্দেহ বাড়ে শাহাজান এবং তাঁর পরিবারের প্রতি।

ছইফা বেগম জানান, ‘ঘটনার দিন সকালে আমার বড় মেয়ে নাঈসা ও ফাহমিদা চিনি কিনে আনতে শাহাজানের দোকানে যায়। সেখান থেকে নাঈমা একা বাড়ি ফিরে আমাকে জানায় শাহাজান তাঁর মায়ের কথা বলে ফাহমিদাকে বাড়িতে নিয়ে গেছ। ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে আমার ছোট মেয়ে না ফেরায় শাহাজানের বাড়িতে খোঁজ নিতে যাই। তখন শাহাজান ও তার মা রাবিয়া বেগমের কথাবার্তায় সন্দেহ হয়। পরে খবর পেয়ে আমার স্বামী বাড়িতে আসেন। আমরা খোজাখুঁজির পর বাড়ির পাশে ডোবাতে কাঁদার মধ্যে আমার মেয়ের লাশ দেখতে পাই। খবরটি জানাজানি হলে শাহাজান ও তার মা রাবিয়া বেগম এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরদিন তার ভগ্নিপতি ওদুদ, চাচি সেলিনা ও চাচাতো বোন শারমিন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

স্থানীয় কাজিরগাঁও এলাকার গ্রাম্য সর্দার আব্দুল কাদির বলেন, কে বা কারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা জানিনা। তবে ঘটনার দিন শাহাজানের বাড়ির পাশে পানির ডোবা থেকে পুঁতে রাখা অবস্থায় ফাহমিদার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের পূর্বে শাহাজান ও ঘটনার পরদিন তার মাতা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এতে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। বিষয়টি সমাধান করার জন্য শাহাজানের চাচা ও ফুফু আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা বর্তমানে কোথায় আছে সেটা পুলিশ কিংবা এলাকার লোকজন কেউই জানেনা।

টিলাগাঁও ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মালিক ফজলু বলেন, আমরা কেউই অনুমান করতে পারিনি কিভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পরে তাৎক্ষণিক আমরা ধারণা করেছি কেউ না কেউ এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমরা এখনও অপেক্ষা করছি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর পুলিশের ভূমিকা কি হয় সেটা জানার জন্য। তিনি আরো যোগ করে বলেন, ফাহমিদার পরিবারের সন্দেহ ছিল পাশের বাড়ির ওই ছেলেটি এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যেহেতু ছেলে ও তার মাতা পলাতক রয়েছে সেহেতু তাদের সন্দেহের সাথে আমাদের সন্দেহের মোটামুটি মিল রয়েছে। এখন পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করলে বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে।

কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন একটি পানির ডোবা থেকে ফাহমিদাকে মৃত অবস্থায় পায় তার পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে ভিকটিম ফাহমিদার পিতা আকমল মিয়া বাদী হয়ে অপমৃত্যুর এজাহার দিলে থানায় অপমৃত্যু মামলা নং-০২/১৮ দায়ের করা হয়। বর্তমানে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখনো ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *