বিএসএফের বাঁধায় ৪৫ কোটি টাকার কাজ বন্ধ, হুমকির মুখে চেকপোস্ট ও মানুষের ঘরবাড়ি মনু নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি স্থানের তীর সংরক্ষণের কাজ পুরোটাই বন্ধ হয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাঁধার কারণে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় বিএসএফ নদীর বাঁধের কাজ করতে না দেয়াতে তারা আগামী বর্ষায় নদীভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে রয়েছে, ভারত বাংলাদেশের চাতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও নদী তীরের কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলা রক্ষা প্রকল্পের শরীফপুর অংশের কাজ এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালে মনু নদীর ভয়াবহ বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার পুরো শরীফপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়ি ঘর হারিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ সময় চাতলাপুর চেকপোস্ট এলাকার রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পুরোটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না। সেই সঙ্গে সীমান্তবর্তী এ ইউনিয়নের লোকজন প্রতিটি মুহুর্তে বন্যা আতঙ্কে তাদের দিন কাটে। কখন যে উজানের নেমে আসা তীব্র স্রোতে আর নদীর গর্জনে ভয়ে অনেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নদীর বাঁধ কিংবা অন্যত্র আশ্রয় নেন। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছেন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মনু নদীর ভয়াবহ বন্যা আর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প কাজ গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুরসহ মোট ৪টি স্থানে মোট ২ কিলো ২০০ মিটার অংশে স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। উক্ত কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকার। ২০২১ সালে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ৪টি স্থানের বাংলাদেশ অংশের বাঁধে মোট ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩২টি সিসি ব্লক নির্মাণ, ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৭ টি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ এবং বাঁধ পুনর্বাসন কাজ রয়েছে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। ৪টি স্থানের মধ্যে দত্তগ্রামে বিএসএফের সাথে বিজিবির সহযোগিতায় পতাকা বৈঠকের পর মৌখিক সম্মতিতে কাজ বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও গতবছরের ১৩ জানুয়ারি থেকে বিএসএফের বাঁধার কারণে নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুর এলাকায় কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথমবার নদীতে জিও ব্যাগ ফেলতে চাইলে ভারতীয় বিএসএফ তাদের কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর আরও একাধিকবার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলতে গেলে এতেও বাঁধার সম্মুখীন হয়। এতে করে টানা এক বছর পাঁচ মাস ধরে নদীর ভাঙন রক্ষায় তীর সংরক্ষণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি মাসের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে পাউবোর সিদ্ধান্তমতে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন জানান, তারা জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক তৈরি করে এক বছর ধরে বসে আছেন। একাধিকবার কাজের চেষ্টা করেও বিএসএফের বাঁধায় তিনটি স্থানে কাজ করতে পারছেন না।

 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, ৪টি স্থানের কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে বিজিবির সহযোগিতায় বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠক করে মৌখিক সম্মতিতে দত্তগ্রাম স্থানের কাজ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ হতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ভারতের নয়াদিল্লীতে একটি ডিও পত্র প্রদান করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত কোন অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উক্ত স্থানের স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য ভারত হতে কাজটি বাস্তবায়নের অনুমোদন প্রয়োজন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *