বড়লেখা প্রতিনিধি : বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ গ্রামে প্রভাবশালী ছালেক উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে বেঁড়া নির্মানের অভিযোগ উঠেছে। এতে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিবেশী কামাল উদ্দিন ও ছালেক উদ্দিনের বড়ভাই মাহমুদ আলী। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বড়লেখা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন (মামলা নং- ০৩/২১) দায়ের করলে আদালত ওই ভূমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরবর্তীতে ওই মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বলা হয়। পরে দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস শহীদ সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন।
মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ মৌজায় (জেএলনং এস.এ-১২৩, আরএস ১৩৫, খতিয়ান নং-৪৪৬, দাগ নং- ২৩১৪, দাগ নং আরএস- ৪৩৭০ দাগের ভূমি পুকুরপার রকম ৫.৭৫ শতক ভূমির মালিক দক্ষিণভাগ গ্রামের বাসিন্দা মৃত তনজব আলীর ছেলে কামাল উদ্দিন। এখানে মৌরসী স্বত্বে ৩.৭৫ শতক ভূমি ও ১২ শতক ভূমি বাড়ি ও পুকুর রকম ভূমি কামাল উদ্দিনের পিতা তনজব আলী প্রতিবেশী ময়না মিয়ার কাছ থেকে ২০০৩ সালে ৭২২ নং দলিলমূলে খরিদ করেন। ওই ১২ শতকের মধ্যে ২ শতক পুকুর রকম ভূমিতে পড়েছে। পুকুরের দক্ষিণপাশে কামাল উদ্দিনের মূল বাড়ি পড়েছে। সেখানে ১৪ ধরে বছর ধরে তারা পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সম্মুখ অংশে ৫ শতক ৭৫ শতাংশ পুকুর রকম ভূমি পুকুর হিসেবে ব্যবহার ও পুকুরের পশ্চিম পার দিয়ে উত্তরমুখী রাস্তা ব্যবহার করে আসছেন কামাল উদ্দিন। কিন্তু একই এলাকার বাসিন্দা ইসরাব আলীর ছেলে প্রভাবশালী ছালেক উদ্দিনের এখানে দখল না থাকা স্বত্বেও জোরপূর্বক বেআইনীভাবে ওই ভূমি দখল করে নেন এবং কামাল উদ্দিনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি প্রায় দেড় মাস আগে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। পরে তিনি রাস্তা খুলে দিতেএক লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন। পরে ওই পুকুর সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরেন এবং মাটি খোদাই করে বাড়িতে নিয়ে যান। চলাচলের জন্য ৬ ফুট চওড়া এই রাস্তা ব্যবহার করতেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ অন্যরা। যার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না কামাল উদ্দিনের পরিবারের লোকজন। কোন উপায় না পেয়ে তিনি কর্মস্থলে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কিছু দিন থাকেন। পরবর্তীতে বাড়িতে আসলে বের হওয়ার রাস্তা না থাকায় তিনি বর্তমানে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত রয়েছেন। রাস্তা বন্ধের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ছালেক উদ্দিন কামাল উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এদিকে ওই ভূমির পাশে ছালেক উদ্দিনের বড়ভাই মাহমুদ আলীর বাড়িও পড়েছে। সেই বাড়ির রাস্তাটিও তিনি বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। প্রতিবাদ করার কারণে এলাকার একটি মারধরের মামলায় তাকে আসামী করলে মাহমুদ আলী ৪ মাস জেলও কাটেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার চেয়েও প্রতিকার পায়নি বলে তাদের অভিযোগ। ওই ভূমিতে পরবর্তীতে আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেন। তারপরও ছালেক উদ্দিন কারো কোন কথা না শুনে রাস্তাটি বেড়া দিয়ে বন্ধ রেখেছেন এবং আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন ফের আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বড়লেখা থানার এসআই এরশাদ মিয়া সরেজমিন তদন্ত করে পেনাল কোড ১৮৮ ধারার অপরাধ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় বিবাদী ছালেক উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির জন্য শনিবার আদালতে আবেদন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে ছালেক উদ্দিনের বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে সরু একটি মাটির রাস্তা। ওই রাস্তার দক্ষিণ প্রান্তে কামাল উদ্দিনের বাড়ি। তাদের বাড়ির চারপাশে আরো অনেকের বাড়ি রয়েছে। চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে কামাল উদ্দিনের বাড়ির পূর্ব ও উত্তরপাশের্^ পুকুর ঘেষে বেড়া নির্মাণ করেন ছালেক উদ্দিন। যার কারণে ওই রাস্তা দিয়ে ভুক্তভোগী কামালসহ আশপাশের কয়েক পরিবারের লোকজন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না।
মামলার বাদী কামাল উদ্দিন জানান, ‘আমাদের ৫.৭৫ শতাংশ পুকুর রকম ভূমি দখল করে বেড়া দিয়ে চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করেছেন এলাকার প্রভাবশালী ছালেক উদ্দিন। এখন বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে প্রতিবেশীর বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এতে সন্তানদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। রাস্তা নিয়ে কোন কথা বললে আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। কখন কোন ঘটনা ঘটিয়ে ছালেক আমাদের ফাঁসিয়ে দেন, সেই দুশ্চিন্তায় পুরো পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে।’ আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছি। কোন সমাধান না হওয়াতে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।
আরেক ভুক্তভোগী অভিযুক্ত ছালেক উদ্দিনের বড়ভাই মাহমুদ আলী বলেন, আমার বসতবাড়ির রাস্তাও বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে আমার ছোটভাই ছালেক। আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছি। আমি প্রতিবাদ করাতে উল্টো এলাকার একটি মারধরের মামলায় জড়িয়ে আমাকে ৪ মাস জেল কাটিয়েছে।
অভিযুক্ত ছালেক উদ্দিন বলেন, ১২ শতক জায়গাটি আমার খরিদা। এখানে কামাল উদ্দিনের কোন জায়গা নেই, রাস্তাও নেই। এখন তারা যদি এই জমি ক্রয় করে থাকে তাহলে ওই জমি যিনি প্রথমে বিক্রি করেছেন সেটা তিনি প্রতারনা করে বিক্রি করেছেন।
দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস শহীদ বলেন, সরেজমিন ওই ভূমিটি পরিদর্শন করি। কিন্তু বিবাদী ছালেক উদ্দিনকে একাধিকবার ডাকলেও তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। পরবর্তীতে বাদী কামাল উদ্দিনের পক্ষে উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, রাস্তা বন্ধের পক্ষে কেউ না। বাদী কামাল উদ্দিন খুবই নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। তাকে বিবাদী ছালেক উদ্দিন নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য বিবাদীকে একাধিকবার ডাকলেও তিনি আমাদের কোন কথা শুনেননি।