মৌলভীবাজারের পাত্রখোলা বাগান থেকে চা শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় চা শ্রমিকদের ঘর করে দেয়া হবে, জীবনমান উন্নত করা হবে

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানের চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে এই প্রথম সরাসরি প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু টা শ্রমিকদের ভোটাধিকার দিয়েছেন, আর আমি আপনাদের ঘর করে দিব, জীবনমান উন্নত করা হবে। চা বাগান হলো দেশের সৌন্দর্য্য, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। চা শ্রমিকদের সাথে আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রথম চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় তিনি চা শ্রমিক ও চা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করেন। আওয়ামী সরকার চা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পঞ্চগড়ে চা বাগান তৈরি করা হয়। তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিকেরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক ভূমিকা রেখেছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যেন কষ্ট না থাকে সে জন্য আমরা অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চা শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চা শ্রমিকরা অবহেলিত থাকতে পারে না। তাদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখতে পারে এবং চা শিল্পের উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। তাদের চিকিৎসা, এ্যাম্বুলেন্স, বাসস্থান ও তাদের সন্তানদের শিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিকরা পাহাড়ি জায়গায় কষ্ট করে কাজ করেন। সেজন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা উচিত। গ্র্যাচুইটির বিষয়টিও গুরুত্ব প্রদান করা হবে। চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হবে।

শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৪ টায় কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের দলই ভ্যালি মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকেরা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। এ সময় জেলার অন্যান্য উপজেলার চা বাগানে তিনটি করে  প্রজেক্টরেরে মাধ্যমে পুরো ভিডিও কনফারেন্সটি দেখানো হয়। এ ছাড়া  হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া চা বাগান, সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা শ্রমিকদের ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই কমলগঞ্জ চা শ্রমিকদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শ্রমিক নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি-দাওয়া জানানোয় এই আয়োজন করেছে প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, বাসস্থান, চিকিৎসা, উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ^াস দিয়েছেন।

ভিডিও কনফারেন্সে শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপকালে মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানের চা শ্রমিক ঋতা পানিকা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আপনার বাবার মতো আমাদের পাশে আছেন। আপনি আমাদের মা জননী, আপনি মজুরি বৃদ্ধির জন্য যে কষ্ট করেছেন এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনি আমাদের কষ্ট বোঝার জন্য ধন্যবাদ। পাত্রখোলা চা বাগানের সোনামনি রাজবংশী বলেন, চা শ্রমিকদের সাথে এই প্রথম সরাসরি কথা বলায় আমরা শ্রমিকেরা অথ্যন্ত আনন্দিত। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চা খেতে কমলগঞ্জে আসার আমন্ত্রণ জানালে তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিতেন তাহলে তাদের মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধি হতনা।

পাত্রখোলা চা বাগানে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নেছার আহমেদ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক আলহাজ্ব মিসবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রামভজন কৈরি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালসহ বিভিন্ন ভ্যালীর সভাপতি-সম্পাদক, বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে বেতন বাড়ানোর দাবিতে টানা ১৯দিন আন্দোলন করছিলেন দেশের সকল চা বাগানের শ্রমিকেরা। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ২৭ আগস্ট মালিকদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে বাগান মালিকদের সাথে আলাপ করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রায় ১৯ দিন পর থেকে বাগানে কাজে ফিরেন আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা। তবে আন্দোলনের শুরু থেকেই তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। পরে চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের পর চা শ্রমিকদের খোঁজখবর নিতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *