বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

একদিন পরেই বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ি আগামী শনিবার (১৯ নভেম্বর) এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অনুমতি এখনও দেয়নি পুলিশ।   তবে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন মাঠ সিলেট সিটি করপোরেশনের। তাই সিসিক ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের লিখিত অনুমতি নেয়া হয়েছে এবং পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে। তবুও সিলেটের এ গণসমাবেশকে নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।   সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগজুড়ে চলছে মিছিল,সভা-সমাবেশ ও প্রচারপত্র বিলি। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়েছেন সিলেট বিএনপি ও উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ।   মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওসমানীনগর উপজেলায় প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লুনার গাড়ি ভাংচুর করে এবং এ সময় পুলিশ ছাত্রদলের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করে।   এছাড়া মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে এ পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ৭ জন নেতাকর্মী। তাছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় ওসি অজয় চন্দ্র দেবসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয় এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলারও প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুরিশ সূত্র।   এদিকে-বুধবার (১৬ নভেম্বর) আলিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়,মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। তৈরি হচ্ছে ৭০ ফুট লম্বা ৩০ ফুট প্রশস্তু মঞ্চ। গণসমাবেশ ঘিরে মিছিল মিটিং ও ব্যানার ফেস্টুনে নগর জুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসব মুখর পরিবেশ।   দলের নেতা-কর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ সফল হওয়ার পর থেকে সিলেটের গণসমাবেশ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। সমাবেশের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন নেতাকর্মীরা ছুটে চলছেন মিটিং, সভা, প্রচার মিছিলে। নগর থেকে গ্রামের সবস্থানেই তাদের প্রচার কার্যক্রম চলছে সমান তালে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ দফায় দফায় বৈঠক সভা সমাবেশ করেছেন। জেলা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ছুটে যাচ্ছেন নেতৃবৃন্দ। শুক্রবারের (১৮ নভেম্বর) মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র।    সমাবেশকে বানচাল করতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে অভিযোগ করে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন- হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের পর মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) ওসমানীনগরে বিএনপির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়ি বহরে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে। নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। ওইখান থেকে তাদের দুই নেতাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া যতগুলো বিভাগে বিএনপি গণসমাবেশ করেছে সবগুলোতে আগে থেকে সরকারের নির্দেশে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সিলেটেও এমনটি হলো। তবে কোনো বাধাই সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পরবে না। সমাবেশ সফল করতে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।   বিএনপি নেতারা বলছেন, সব বাধা ডিঙিয়ে ১৯ নভেম্বর সিলেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ করবেন তারা। সাড়ে চার লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য বিভাগের মতো সিলেটেও পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলেও আগে আসা নেতাকর্মীদের থাকার জন্য নগরের প্রায় সবগুলো কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দেওয়া হয়েছে। সিলেট নগরের সেবাহানিঘাট এলাকার আগ্রা, মানিকপীর রোডের মালঞ্চ, সাপ্লাই এলাকার নুরে আলা, পাঠানটুলা এলাকার সাজিদ আলীসহ অন্তত আটটি কমিউনিটি সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবগুলোই ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য ভাড়া হয়ে গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে এগুলো বুকিং দেওয়া হয়েছে।   সিলেট জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে নগরের অন্তত ২৫টি কমিউনিটি সেন্টার ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য বুকিং নেওয়া হয়েছে। সেখানেই কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ ছাড়া নগরের খোলা মাঠগুলোতেও কর্মী-সমর্থকদের রাত যাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।   সিলেটে যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা, বিশৃংঙ্খলা ও জনগণের জানমালের কোন ক্ষতিসাধন না হওয়ার লক্ষে সিলেট জুড়ে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। সিলেটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নগরজুড়ে বসানো হয়েছে ১৯টি চেকপোস্ট এমনটি জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গৌতম চক্রবর্তী।   সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো বিভাগে বিএনপি গণসমাবেশ করেছে সবগুলোতে আগে থেকে সরকারের নির্দেশে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সিলেটেও এমনটি হলো। তবে কোনো বাধাই আমাদের সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।   এদিকে সিলেটে বিএনপির সমাবেশের আগে সিলেট ও মৌলভীবাজারে আগামী শনিবার (১৯ নভেম্বর) পরিবহন ধর্মঘট ডাক দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম।   বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, আমাদের সমাবেশ বানচাল করতে নানাভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। এসব বাধা ডিঙিয়ে আমরা সমাবেশে গণজোয়ার সৃষ্টি করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *