ভাটগাঁও মসজিদের সম্প্রসারণ নিয়ে দুটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শতবর্ষী দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদ সম্প্রসারণ ও পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে পারিবারিক বিরোধ ও মনমালিন্যের কারণে মসজিদ কমিটির বিবদমান দুটি পক্ষের বিরোধ এখন তুঙ্গে। দীর্ঘদিন থেকে বিরোধের কারণে মসজিদের সম্প্রসারণ, মামলা জটিলতায় স্থানীয় মুসল্লীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দুটি পক্ষ। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান কর্মসূচি করে একে অপরপক্ষকে দোষারোপ করছেন। যারফলে শতবর্ষী মসজিদ সম্প্রসারণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

জানা যায়, প্রায় শত বছর আগে দক্ষিণ ভাটগাঁও মসজিদটি নির্মাণ করা হয় এবং গ্রামের মুসল্লীগণ নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। ১৯৫৬ইং সনের এস.এ জরিপে ৯৪০ নম্বর খতিয়ানের ৪৯৩২ নম্বর দাগের ৩ শতক ভূমি দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদের নামে রেকর্ড হয়। এস.এ জরিপের বহুপূর্বে ৯৪০ নম্বর খতিয়ানের মালিকগণের পূর্ববর্তীগণ ৩ শতক ভূমি মসজিদ বরাবরে দান করলে ওই ভূমিতে পাকা টিনের মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদ নির্মাণের পর মুসল্লিদের ওযু করার জন্য কোন পুকুর ছিলনা। মসজিদের লগ্ন দক্ষিণাংশে মবই নামে এক ব্যক্তি ২ শতক জমি বিনা শর্তে পুকুরের জন্য দান করেন। পরবর্তীতে সময়ের প্রয়োজনে মুসল্লীদের নামাজের স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ নিয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এস জামান ও সহ-সাধারণ সম্পাদক শামছুল আরেফীন কামাল গংদের মধ্যে নানা বিষয়ে মনমালিন্য তৈরি হলে মসজিদ সম্প্রসারণ কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। এতে এলাকার স্থানীয় লোকজন ও মুসল্লীরা পড়েছেন বিপাকে। নানা অজুহাত দেখিয়ে উভয়পক্ষ অভিযোগ, মামলা, আপোষনামা, নতুন করে দলিল তৈরি করে কারসাজিসহ অন্যান্য মতবিরোধে মসজিদ সম্প্রসারণে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। মসজিদ সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশি বৈঠক হলেও একপক্ষ অপরপক্ষকে ছাড় না দেয়ায় বিষয়টির স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি।
এদিকে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মসজিদ সম্প্রসারণ ও মসজিদের মুসল্লীদের নিয়ে বিভিন্ন অপ্রচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শামছুল আরেফীন কামাল গং। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মসজিদের সামনে এ কর্মসূচি করে মসজিদের মুসল্লীগণ। এরআগে প্রতিকার চেয়ে শামছুল আরেফীন কামাল ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শিক্ষক এম এস জামানের কবল থেকে মসজিদের জমি উদ্ধার ও তার বিচারের দাবিতে ২১ সেপ্টেম্বর এক বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন।

অন্যদিকে এম এস জামান শনিবার সকাল ১১টায় নিজ বাড়িতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও মসজিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে এম এস জামান লিখিত বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে স্বচ্ছতার সাথে তিনি সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। সম্প্রতি তাকে এবং তাঁর পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাক ও শামছুল আরেফীন কামাল গং তাঁর বিরুদ্ধে মসজিদ সম্প্রসারণে বাঁধা ও মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেন। তিনি বলেন, মসজিদ সম্প্রসারণ কাজ করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা চাই মসজিদ সম্প্রসারণ হউক। কিন্তু মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের আসামী করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মসজিদের পাশের জমি আমাদের রেকর্ডীয়। আমার শশুরের কোন প্রভাব খাটিয়ে দলিল তৈরি করা হয়নি। দলিল দাতারা স্থানীয় মুসল্লীদের সাথে আলোচনাক্রমে সভা করে রেজুলেশনের মাধ্যমে মসজিদের নামে জমিটি দানপত্র করে দেন। তাছাড়া ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামছুল আরেফীন কামাল তাদের করা মামলাটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত বৈঠকে হলেও তিনি মামলা প্রত্যাহার না করায় মসজিদের সম্প্রসারণ কাজ হচ্ছেনা।

অবস্থান কর্মসূচিতে শামছুল আরেফীন কামাল অভিযোগ করে বলেন, শনিবার নিজ বাড়িতে মনগড়া সংবাদ সম্মেলন করে এম এস জামান একজন শিক্ষক হয়ে কিভাবে আমাদের এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আপত্তিকর যে মন্তব্য করেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। কোন পদের জন্য আমার লোভ নেই। এলাকার লোকজন মসজিদ সম্প্রসারন করার জন্য আমাকে জোর করে সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। আমি মসজিদ সম্প্রসারণ করার প্রানপ্রণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু মসজিদ সম্প্রসারণ করতে এলাকার একটি পক্ষকে নিয়ে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন এম এস জামান। যারকারণে দীর্ঘদিন থেকে শতবর্ষী মসজিদটি নতুন করে সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। তাঁর নেতৃত্বে ভূয়া দলিল সম্পাদন করে মসজিদের জমি নিজ কবলে রেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে মসজিদ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছে। প্রতিপক্ষ এম এস জামান তাঁর পিতা আব্দুস শুকুরসহ ২০ জনকে দাতা বানাতে গিয়ে মসজিদের নামে সকল রেকর্ডীয় কাগজপত্র থাকার পরও তাঁর শশুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনুর প্রভাব খাটিয়ে ৩ শতক ভূমি ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারী কুলাউড়া সাবরেজিস্ট্রারী কার্যালয়ে ১৪৪/২২নং দানপত্র দলিল সম্পাদন করেন। ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়, দলিলের দাতা কিংবা দাতাগণের ওয়ারিশানের মধ্যে হতে আজীবন মসজিদের মোতাওয়াল্লী থেকে মসজিদ পরিচালনা করবেন। ওই স্বার্থ হাসিলের জন্যই ভূয়া দলিলের সৃষ্টি করা হয়। মসজিদ নিয়ে আমরা কোন রাজনীতি চাইনা। আমরা শান্তিশৃঙ্খলা চাই। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, এলাকার মুসল্লীদের স্বার্থে অতিদ্রুত দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তি করে মসজিদ সম্প্রসারণে যেন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, মসজিদটি পরিচালনা ও সম্প্রসারণের বিষয়ে দুটি অভিযোগ পেয়েছি। উভয়পক্ষকে নিয়ে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *