কুলাউড়া প্রতিনিধি: দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, বিশিষ্ট কবি হাসান হাফিজ বলেছেন, আমাদের সবার দায়িত্ব হলো এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এখন আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি, আমরা সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখানে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা প্রধান। ছাত্রজনতার যে আকাঙ্খা, বিপ্লব ও অভ্যুথানের যে পরিবর্তন সেই রক্তের সাথে যেন তারা বেঈমানী না করেন সেই আহবান জানাচ্ছি। ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে কুলাউড়া শহরস্থ দখিন দাওয়া নামের একটি হলরুমে রাজনীতিবিদ শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপনের “সাঁঝবেলা” উপন্যাসের প্রকাশনা উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন, প্রবাসীরা আমাদের থেকেও আরো বেশি দেশপ্রেমিক। তাদের রক্তের মূল্যে রেমিট্যান্স বা রিজার্ভ নিয়ে আমরা এত অহংকার করি, শূন্য থেকে ২১ বিলিয়ন এসেছে রিজার্ভ। আমি সংবিধান সংস্কার কমিশনে একটা সময় যখন আমাকে ডাকা হয় তখন আমি প্রস্তাব করেছি, শুধু সংসদে নয় মন্ত্রিসভায়ও যেন প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এটা করতে কারণ প্রবাসীরা এবং দেশের গার্মেন্টসের কর্মীরা দেশের জন্য দুটি লাইফ লাইন। এ দুটিকে মাইনাস করলে আমরা হয় দুর্ভিক্ষে পড়বো না হয় মারা যাবো। সুতরাং এর মধ্যে থেকেও যারা প্রবাসে থেকে এত নির্যাতন সহ্য করে সাহিত্য চর্চা করছেন তাদের মধ্যে শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন অন্যতম।
তিনি আরো বলেন, যখন স্বৈরশাসকের কবলে আমরা ছিলাম, দীর্ঘ ১৬ বছর পর সেই সর্বোপরি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুথান যেটাকে আমি বিপ্লব বলে বিশ্বাস করি, যেটাকে অনেক তাত্ত্বিকরা বিপ্লব বলতে চাননা। নিজের চোখে আমরা দেখেছি, সামনে মৃত্যু দেখে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে তাহলে আমরা কেন এটাকে বিপ্লব বলবো না কেন। সুতরাং আমরা এটাকে অবশ্যই বিপ্লব বলবো। প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে ৩৬ জুলাই, সামনে কিন্তু আরো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেটাকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুন্ন রাখা এবং এই বিপ্লবকে সংহত করা এবং স্থায়ী করা ঘরে ঘরে সেটা পৌঁছে দিতে হবে। কুলাউড়ায় গত কয়েকদিন আগে সীমান্তে একটি প্রাণ ঝড়েছে, আমরা সীমান্তে কোন রক্তপাত চাইনা পরিস্কার কথা, আমরা কাঁটাতারে কোন ফেলানীর লাশ দেখতে চাই না। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে এবং তাদের অনেক সৈন্য প্রাণ দিয়েছে সেজন্য তাদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ কিন্তু তাই বলে আমাদের মাথা বিক্রি করে দিতে পারিনা। আমরা কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বিশ্বাস করিনা। বাংলাদেশকে সম্মান করতে হবে। রক্তপাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমতা, সমঝোতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাশীলতার ভিত্তিতে। ভারতে থেকে শেখ হাসিনা কিন্তু উস্কানি দিয়ে চলেছেন। ষড়যন্ত্র কিন্তু একটার পর একটা হচ্ছে। আপনারা অভিনব সব ষড়যন্ত্র দেখেছেন। জুডিশিয়াল কু দেখেছেন, পুলিশের বিদ্রোহ, আনসার বিদ্রোহ, আমলাতান্ত্রিক বিদ্রোহ দেখেছেন। কোন কিছু রোধরাতে ছাত্ররা রাস্তা মাঠে নেমে যাচ্ছেন। আমি কিন্তু বলবো, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা, দেশপ্রেম ও সততা নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু তাদের মধ্যে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাব আছে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। পাঁচ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এখনো নিত্যপণ্যের জন্য সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ছাত্র জনতার যে আকাঙ্খা এবং সংস্কারে যে প্রত্যাশা সেই ভাষা যেন তারা পাঠ করে যেন তারা নিজেদেরকে যেন সংস্কার করে। আনন্দের কথা, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগেই সংস্কারের যে প্রস্তাব ছিল সেটা বাস্তবে দেখতে চাই। আমরা কোন নতুন চাঁদাবাজি এক জায়গায় হাতবদলটা দেখতে চাইনা। তাহলে কিন্তু আমাদের মুক্তি হাত ছাড়া হয়ে যাবে কিন্তু বিপ্লব ব্যাহত হয়ে যাবে। সাঁঝবেলা উপন্যাস নিয়ে কবি হাসান হাফিজ বলেন, বইটি আমি পড়েছি। এটার মধ্যে আন্তর্জাতিকতা আছে। এটার মধ্যে করোনাকালীন সময়ের অনিশ্চয়তা আছে, কষ্ট ও মানুষের নিসঙ্গতা আছে। এই বইটি থেকে ভালো নাটক কিংবা ছবি হতে পারে।
রুদ্রবীনা সংগীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ও কবি ইব্রাহিম খলিল ও শহীদুল ইসলাম তনয়ের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা কাউন্সিলের সদস্য ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, রাজনীতি সমাজে অক্সিজেনের মতো কাজ করে। যে সবচেয়ে বেশি রাজনীতিকে বেশি ঘৃণা করে সেও কিন্তু আসলে রাজনীতির মধ্যে বাস করে এবং সেটারি প্রমাণই গত ৫ আগস্ট। যারা বলেছে, আমরা কোটা চাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোটার দাবি আর কোটাতে থাকে নাই। এটা এতটাই রাজনৈতিক দাবীতে পরিণত হয়েছে সেটা প্রধান রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিকে দানব হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়েছে। আগামীতে আরও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্রজনতার আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলির বাইরেও সাধারণ মানুষের লক্ষ মানুষের সংশ্লিষ্টতা দল নিরপেক্ষ মানুষের রক্ত ও জীবন দান, আবু সাঈদের দুই হাত তুলে নিজের জীবন উৎসর্গ করা। এই যে কোটি কোটি নির্দলীয় মানুষের প্রতি রাজনৈতিক মনষ্কতা তৈরি করে এটাই কিন্তু হচ্ছে রাজনৈতিক সাহিত্যের কাজ। শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন ছাত্রদলের নেতা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়ে সাহিত্য নিয়ে যে চর্চা করছেন সেটি একটি উদাহরণ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাঁঝবেলা উপন্যাসের লেখক প্রবাসী কমিউনিটি নেতা শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা কাউন্সিলের সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, কুলাউড়ার সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, তৈমুল হোসেন খান, সিলেট এমসি কলেজের অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন বাবলু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড.আব্দুর রকিব ও আয়েশা আক্তার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বেগম আয়েশা সিদ্দিকা, সাংবাদিক এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, প্রভাষক সিপার আহমদ, লেখক অপূর্ব শর্মা, কবি মোস্তফা মহসিন, রাজনীতিবিদ রেদোয়ান খান, বদরুজ্জামান সজল, মইনুল ইসলাম শামীম, সুফিয়ান আহমেদ, সংগঠক শফিক মিয়া আফিয়ান, ব্যবসায়ী শেলুর রহমান, সংস্কৃতিকর্মী নির্মাল্য মিত্র সুমন, কদরুল হক মারুফ, বিপুল চক্রবর্তী, লেখক ও কবি মোস্তফা মহসীন, কামরুল হাসান, নুরুল ইসলাম ইমন, সিরাজুল আলম জুবেল, আব্দুল খালিক, লেখকের বোন তাহেরা চৌধুরী বীনা, সাংবাদিক মোক্তাদির হোসেন ও কুলাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক নাজমুল বারী সোহেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিরা রাজনীতিবিদ শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপনের নতুন উপন্যাস ‘সাঁঝবেলা’-এর প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। উল্লেখ্য, সাঁঝবেলা গ্রন্থটিতে জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পটভূমিসহ সামাজিক রাজনৈতিক বিষয়সমূহ স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি বইটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে।