মাহফুজ শাকিল : বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে অনেক কষ্ট করে একমাত্র সম্বল গরু বিক্রি করে একমাত্র ছোট বোন সুকন্তি উরাংকে বিয়ে দেন ভাই আনন্দ্রা উরাং। বোনের বিয়ের পর নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে আসবাবপত্র না দেওয়ার বিয়েও টিকেনি।
আনন্দ্রা উরাং বলেন, বোনের কষ্ট দেখে নিজেও বিয়ে করেন নি। দুই কক্ষের ঘরে একটিতে থাকতো পালিত গরুটি। অন্যঘরটিতে থাকতেন তিনি ও তার ছোটবোন সুকন্তি উরাং। সেখানেই ছিল রান্নার ব্যবস্থাও। নিজের বাড়ির সাথেই কাঁচা টয়লেট থাকাতে দূর্গন্ধে টিকা বড় মুশকিল। মাঝে মাঝে বাইরেও যায়। রাজানগর চা বাগানের এই কুঁড়ে ঘরে বড় কষ্ট করে দিনানিপাত করেছি যুগ যুগ থেকে। অসুখ বিসুখ ছাড়ে না। তবে এবার আর সেই ঘরে থাকতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নতুন ঘর দিয়েছেন যেখানে টয়লেটও আছে রান্নার ঘরও আছে। আমার ঘরটি পুরোদমে বাবু-সাহেবের ঘরের মতো।
আনন্দ্রা উরাং কালের কণ্ঠকে বলেন, “হামনিকের নতুন ঘরে হামরা দুর্গাপুজা কারবই”(এবারের দুর্গাপুজা নিজের নতুন ঘরে থেকেই করবো)।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কেবল আনন্দ্রা উরাং নন নতুন ঘর পেয়েছেন মুরাইছড়া চা বাগানের সাবিত্রি রাজভর, দিলদারপুর চা বাগানের রমন ভুমিজ, বোরহাননগর চা বাগানের বাসন্তি শুক্লবৈদ ও আসকরাবাদ চা বাগানের আশরু উরাং। শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে নতুন ঘর প্রাপ্তিতে তাদের পূজার আনন্দকে আরো অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে এই প্রতিবেদককে তারা জানান।
আশরু উরাং বলেন, নিজের ঘরে থেকেই দুর্গাপুজা করবো সেটা মনে করেই অনেক ভালো লাগছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার একটু ভিন্নধর্মী।
লংলা চা বাগানের সঞ্জু বাকতি বলেন, ‘জীবনেও ভাবছি না নিজের ঘরে করতে পারবো। প্রতিবছর কারো না কারো দুয়ারে দুয়ারে যেতে হয়। এইবার ভগবান মুখ তুলিয়া চাইছইন। নতুন ঘরে প্রথম দুর্গাপুজা করবো। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নাই’।
উপজেলা বাস্তবায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলী বলেন, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের অর্থায়নে এই ঘরগুলো ২য় বছরের মতো পাইলটিং করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি বাড়ির মূল্য চার লক্ষ টাকা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে কুলাউড়াতে ১৯টি অতি দরিদ্র চা শ্রমিক পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে যা সপ্তাহ খানিকের মধ্য হস্তান্তর করবো। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাস্তবায়নে সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে “বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা” কর্মসূচি থেকে গতবছর তিনটি ঘর ও এবছর আরো দুটি ঘর দেওয়া হয়েছে। এই ঘরগুলো তাদেরই দেওয়া হয়েছে যাদের কিছুই নেই। এজন্য প্রতিটি ঘর নিজেই বারবার পরিদর্শন করছি যেন কোন রকমের ত্রুটি না থাকে। অন্যদিকে এসব মানুষ এতই দরিদ্র যে পরবর্তীতে বাড়িটি সংস্কার করতেও পারবে না। চা বাগানে এসব ঘরের চাহিদাও বেশি।